ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাত

ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজার মরদেহ

ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ঘরবাড়ি। এর নিচে স্বজনদের খুঁজে ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা। গতকাল গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে
 ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নারকীয় হামলায় বিধ্বস্ত অসংখ্য ভবনের নিচে এখনো হাজারের বেশি মরদেহ চাপা পড়ে রয়েছে। তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। তাই নিহত ব্যক্তিদের তালিকায় তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। গতকাল শুক্রবার ডব্লিউএইচও এ কথা জানিয়েছে।

এদিকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় গত ২১ দিনে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৭ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধি রিচার্ড পিপারকর্ন গতকাল জেনেভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘গাজায় এক হাজারের বেশি মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আছে বলে আনুমানিক একটা হিসাব আমরা পেয়েছি। এসব মরদেহ এখনো শনাক্ত করা যায়নি।’

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায়। এর পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী বিরামহীন বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ চালিয়ে আসছে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ গতকাল জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৮১ জন নিহত হয়েছেন। এতে নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ৩২৬। তাঁদের ৬৬ শতাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অভিযানে এই কয়েক দিনে নিহত হয়েছেন ১১০ ফিলিস্তিনি।

ইতিমধ্যে গাজা উপত্যকায় হামলায় ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থানবিষয়ক সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) ৫৭ কর্মী এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন। সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পে লাজ্জারিনি গতকাল বলেছেন, ‘এই কর্মীদের মধ্যে শুধু এক দিনেই ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। বেকারি থেকে রুটি সংগ্রহ করতে গিয়ে দুই দিন আগে আমাদের এক সহকর্মী নিহত হন।’

ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, গাজার ১২টি প্রধান হাসপাতালে জরুরি অস্ত্রোপচার চালিয়ে যেতে দিনে কমপক্ষে ৯৪ হাজার লিটার জ্বালানি প্রয়োজন। কিন্তু জ্বালানি–সংকটে সেখানকার হাজারো রোগীর জীবন এখন ঝুঁকিতে।

পিপারকর্ন সতর্ক করে বলেছেন, কিডনির ডায়ালাইসিস প্রয়োজন, এমন ১ হাজার রোগী, ইনকিউবেটরে থাকা ১৩০ নবজাতক, ২ হাজার ক্যানসার রোগী ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থাকা রোগীরা জ্বালানি–সংকটের কারণে ঝুঁকিতে আছেন।

মস্কোয় হামাস প্রতিনিধিদল

চলমান সংঘাতের মধ্যে মস্কোয় ইরান ও হামাস নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাশিয়ার কর্মকর্তারা। মস্কো সফররত হামাসের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুসা আবু মারজুক। আর ইরানের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাঘেরি কানি তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বৃহস্পতিবার তাঁরা মস্কোয় পৌঁছান।

এদিকে হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর দ্বিতীয় দফায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানে অবস্থানরত একজন হামাস কর্মকর্তা, ইরানের বিপ্লবী গার্ডসের কয়েকজন কর্মকর্তা ও গাজার একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে সিরিয়ায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডস বাহিনী ও দেশটি সমর্থিত মিলিশিয়াদের ব্যবহৃত দুটি ঘাঁটিতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরাক ও সিরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের ওপর আক্রমণের জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে হোয়াইট হাউস জানায়।

এই হামলার পর গতকাল সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে মার্কিন সেনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি তেলক্ষেত্রে রকেট হামলা চালিয়েছেন ইরান–সমর্থিত যোদ্ধারা।

গাজায় চূড়ান্ত স্থল অভিযানের প্রস্তুতি

গাজায় চূড়ান্ত স্থল অভিযান বিলম্বিত করার আহ্বান জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব দেশগুলো। এরপরও স্থল অভিযানের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে ইসরায়েল। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ও গতকাল ভোরে গাজায় সীমিত আকারে আরও স্থল অভিযান চালিয়েছে দেশটি।

হামাস–সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গাজার দুটি এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়েছেন হামাস যোদ্ধারা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁরা ব্যাপক গোলাগুলির পাশাপাশি ভারী গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলার শব্দ পেয়েছেন।

হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডস বলেছে, সমুদ্রপথে গাজার দক্ষিণ উপকূলে প্রবেশের চেষ্টা চালায় ইসরায়েলি সেনারা। বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, অভিযানে অংশ নেওয়া নৌবাহিনীর কমান্ডোদের সবাই ফিরেছেন। অভিযানে হামাসের কয়েকটি স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে।