ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে মিসরের কায়রোয় হামাস ও মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যকার দুই দিনের আলোচনা সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়েছে। জীবিত জিম্মিদের তালিকা চেয়ে নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে এ আলোচনায় প্রতিনিধিদল পাঠায়নি ইসরায়েল।
পবিত্র রমজান মাসের আগে এই প্রথম ৪০ দিনের বর্ধিত যুদ্ধবিরতি কার্যকরে সমঝোতায় পৌঁছাতে কায়রোর এই আলোচনাকে চূড়ান্ত ধাপ মনে করা হচ্ছিল। আগামী সপ্তাহে রমজান মাস শুরু হতে যাচ্ছে। নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীন কয়েক ডজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া এবং মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ এড়াতে গাজায় ত্রাণসহায়তা বাড়ানোর বিষয়ে সমঝোতার কথা রয়েছে।
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় হামাসের পাশাপাশি মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মিসরের একটি গোয়েন্দা সূত্র সোমবার জানিয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের উপস্থিতি ছাড়াই আলোচনা চালিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
দুই দিনের আলোচনা শেষে সমঝোতার জন্য আলোচনা আরও একদিন বাড়ানো হয়েছে। হামাসের একজন প্রতিনিধি আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধে তাদের সমঝোতাকারীরা আরও একদিন কায়রোয় অবস্থান করছেন।
হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা বাসেম নাইম রয়টার্সকে বলেন, গত রোববার ও সোমবার দুই দিনের আলোচনায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য মধ্যস্থতাকারীদের সামনে নিজেদের প্রস্তাব তুলে ধরেছে হামাস। এখন ইসরায়েলের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।
বাসেম বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সমঝোতা চান না। তাঁকে সমঝোতায় রাজি করাতে চাপ দিতে বল এখন আমেরিকানদের কোর্টে।
এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি হননি ইসরায়েলের কর্মকর্তারা। একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, জীবিত সব জিম্মির নতুন করে তালিকা দিতে হামাস অস্বীকার করায় ইসরায়েল এ আলোচনায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকে।
তবে হামাস নেতা বাসেম বলেছেন, যুদ্ধবিরতির আগে এ ধরনের তালিকা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, যুদ্ধ চলছে এমন এলাকায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর হাতে জিম্মিরা বিক্ষিপ্তভাবে আটক রয়েছেন।
এদিকে ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় আরও প্রায় ১০০ জন নিহত হয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গত বছরের অক্টোবরে সংঘাত শুরুর পর এই সপ্তাহান্তে প্রথমবারের মতো আল-আওদা এবং কামাল আদওয়ান হাসপাতাল পরিদর্শন করে ডব্লিউএইচও।
পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে হাসপাতাল পরিদর্শনের পর ‘গুরুতর ফলাফল’ পাওয়ার কথা বলেন গেব্রেয়াসুস। পোস্টে তিনি লিখেছেন, খাবারের অভাবের কারণে ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং গাজার শিশুরা ‘চরম মাত্রায় অপুষ্টির’ শিকার হয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৯৭ জন নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় ৩০ হাজার ৬৩১ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ফিলিস্তিনিদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।