জাবালিয়ায় ইসরায়েলি বাহিনী, হামাসসহ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর যোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক লড়াই।
ফিলিস্তিনের গাজার উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়া শরণার্থীশিবির গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল। ঘরবাড়ি, মার্কেট, দোকানপাট ও রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে সব মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে ইসরায়েলি ট্যাংক ও যুদ্ধবিমান। এদিকে ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় আরও ৮৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে।
রাফার পাশাপাশি সম্প্রতি উত্তর গাজায় নতুন করে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। গত শুক্রবার সেখানে ইসরায়েলি বাহিনী, হামাসসহ গাজার সশস্ত্র সংগঠনগুলোর যোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক লড়াই হয় বলে জানা গেছে।
কয়েক দিন আগে একটি ভবনে নিজেদের ট্যাংকের ভুলবশত গোলাবর্ষণে একজন সার্জেন্ট মেজর, একজন ক্যাপ্টেনসহ ছয় ইসরায়েলি সেনা নিহত হন। আহত হন কয়েকজন। এরপর জাবালিয়া এলাকায় হামলা আরও তীব্র করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজার ঐতিহাসিক আটটি শরণার্থীশিবিরের সবচেয়ে বড় জাবালিয়া শরণার্থীশিবির। বাসিন্দারা বলেন, জাবালিয়ার কেন্দ্রস্থলে পৌঁছে গেছে ইসরায়েলি সাঁজোয়া যান। সামনে অগ্রসর হওয়ার পথে সব বাড়িঘর ও দোকানপাট গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বুলডোজারগুলো।
এক দিনে ৮৩ ফিলিস্তিনি নিহত। এ নিয়ে নিহত বেড়ে ৩৫ হাজার ৩৮৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
গাজার উপকূলে স্থাপিত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ঘাট দিয়ে ত্রাণ সরবরাহ শুরু হয়েছে।
একটি চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে পশ্চিম জাবালিয়ার বাসিন্দা আয়মান রজব বলেন, ট্যাংক ও যুদ্ধবিমান আবাসিক এলাকা, মার্কেট, দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ সব গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। আর এর সবই ঘটছে একচোখা বিশ্বের সামনেই।
গাজায় হামলা শুরুর প্রথম দিকের মাসগুলোতেই জাবালিয়াকে ফিলিস্তিনি যোদ্ধামুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিল ইসরায়েল। কিন্তু গত সপ্তাহে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, গাজার যোদ্ধারা যাতে আবার সংগঠিত হতে না পারেন, সে জন্য আবার জাবালিয়ায় অভিযান শুরু করছে তারা।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর গাজার জাবালিয়ায় বোতলে করে পানি সংগ্রহের সময় ইসরায়েলি ট্যাংকের গোলাবর্ষণে নারী–শিশুসহ অন্তত আট ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হন ১০ জন। আল-ফালুজা এলাকায় গতকাল এ হামলার ঘটনা ঘটে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমরা বাড়িঘর ছেড়ে ফালুজা এলাকায় আসি। এই এলাকাকে তুলনামূলক নিরাপদ মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ সেখানে গোলাবর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। কোথায় যাব আমরা জানি না।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া হামলার ভিডিও যাচাই করে দেখে আল-জাজিরা। ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার পর ঘটনাস্থলে অনেকটা স্রোতের মতো রক্ত বয়ে যায়। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশপাশের বাড়িঘর ও দোকানপাট।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় আরও ৮৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০৫ জন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৩৫ হাজার ৩৮৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৯ হাজার ৩৬৬ জন।
গাজা নগরীর সমুদ্র উপকূলে স্থাপিত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ঘাট দিয়ে ত্রাণ সরবরাহ শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার ওই ঘাটে ৯০টি ট্রাকে ত্রাণ বোঝাই করা হয় বলে জানা গেছে।
৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরুর আগে দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাক ত্রাণ অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় প্রবেশ করত। হামলা শুরুর পর গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করে ইসরায়েল। সর্বশেষ গাজার অন্যতম ক্রসিং মিসর সীমান্তবর্তী রাফা দখল করে নেয় ইসরায়েলি বাহিনী।
ত্রাণ প্রবেশে গাজা সীমান্তের ক্রসিংগুলো খুলে দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কিন্তু এতে কর্ণপাত করছে না ইসরায়েল সরকার।