লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত পেজার ও রেডিও ব্যবহার করে যেসব হামলা চালানো হয়েছে তা ‘সব সীমারেখা’ ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। এসব ঘটনার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে তিনি একে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে উল্লেখ করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেছেন নাসরুল্লাহ। লেবাননে পেজার, ওয়াকিটকিসহ হিজবুল্লাহদের ব্যবহৃত যোগাযোগের বিভিন্ন যন্ত্র বিস্ফোরিত হওয়ার পর এটি ছিল তাঁর জনসম্মুখে দেওয়া প্রথম প্রতিক্রিয়া।
বক্তব্যে নাসরুল্লাহ স্বীকার করেছেন যে হিজবুল্লাহকে নজিরবিহীন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। তিনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার এবং এ ঘটনায় ‘ন্যায্য শাস্তি’ নিশ্চিত করার প্রতিজ্ঞা করেছেন।
মঙ্গলবার ও বুধবারের বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা এখনো স্বীকার করেনি ইসরায়েল। লেবাননের কর্তৃপক্ষ বলেছে, এ দুই বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩৭ জন নিহত এবং তিন হাজার মানুষ আহত হয়েছে।
নাসরুল্রাহ যখন কথা বলছিলেন, তখন বৈরুতের আকাশে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এতে জনগণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এদিন লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, ‘হিজবুল্লাহর সন্ত্রাসী সক্ষমতা এবং অবকাঠামোগুলো নষ্ট করতে’ এবং ‘ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে’ তারা অভিযান চালাচ্ছে।
গাজায় যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ১১ মাস ধরে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে আন্তসীমান্ত লড়াই চলছে। হিজবুল্লাহ বলছে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সমর্থনে কাজ করছে তারা। হামাস ও হিজবুল্লাহ উভয়ই ইরান সমর্থিত। ইসরায়েল, যুক্তরাজ্য এবং অন্য দেশগুলো এই দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়েছে।
এর মধ্যেই গত মঙ্গলবার হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত যোগাযোগযন্ত্র পেজারে একযোগে বিস্ফোরণ হয়। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, এতে দুই শিশুসহ ১২ জন নিহত হয়েছে। পরদিন ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে আরও ২৫ জন নিহত হয়।
লেবানন এবং মার্কিন সূত্রের বরাতে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের গোয়েন্দারা সম্ভবত এসব যন্ত্র কিংবা তার ব্যাটারিতে সামান্য পরিমাণে বিস্ফোরক রেখে দিয়েছিলেন।
গতকাল দেওয়া বক্তব্যে নাসরুল্লাহ বলেন, ‘শত্রুপক্ষ সব নিয়মকানুন, আইন এবং সীমারেখা ছাড়িয়ে গেছে। তারা কোনো কিছুকেই পরোয়া করে না, না নৈতিকভাবে, না মানবিকভাবে, না বৈধভাবে।’
হিজবুল্লাহ নেতা আরও বলেন, এটা লেবানন, এর জনগণের, এর প্রতিরোধব্যবস্থা, এর সার্বভৌমত্ব এবং এর নিরাপত্তার ওপর হওয়া বেপরোয়া ও বড় ধরনের আগ্রাসন। এটাকে যুদ্ধাপরাধ বা যুদ্ধের ঘোষণা বলা যেতে পারে- আপনারা একে যে নামেই ডাকবেন বলে ঠিক করুন না তা এর বর্ণনার সঙ্গে মানিয়ে যাবে। শত্রুপক্ষের উদ্দেশ্য ছিল এটা।’
নাসরুল্লাহ স্বীকার করেছেন যে বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো হিজবুল্লাহর ওপর বড় এবং নজিরবিহীন প্রভাব ফেলেছে। তবে তাঁর দাবি, হিজবুল্লাহর পরিচালনা ও যোগাযোগ সংক্রান্ত সক্ষমতা অক্ষত আছে।
নাসরুল্লাহ কঠোর সাজা দেওয়ার শপথ নিয়েছেন। তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহর যে সংঘাত চলমান তা তারা বাড়াতে চায় না।
গাজায় যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত হিজবুল্লাহ আন্তসীমান্ত হামলা অব্যাহত রাখবে বলেও হুঁশিয়ার করেছেন নাসরুল্লাহ।
বৃহস্পতিবার সকালে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা সীমান্ত এলাকায় দুটি ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এর পর সেখানে ড্রোন ওড়ানো হয়। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, হামলায় তাদের দুই সেনা সদস্য নিহত এবং একজন গুরুতর আহত হয়েছেন।