হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলিদের মুক্তির লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি করার দাবিতে নেতানিয়াহুর বাড়ির পাশে বিক্ষোভ করেন বন্দীদের স্বজনেরা। ২২ জানুয়ারি, জেরুজালেম
হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলিদের মুক্তির লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি করার দাবিতে নেতানিয়াহুর বাড়ির পাশে বিক্ষোভ করেন বন্দীদের স্বজনেরা। ২২ জানুয়ারি, জেরুজালেম

গাজায় বাড়ি ধ্বংস করতে গিয়ে গ্রেনেড হামলায় ২১ ইসরায়েলি সেনা নিহত

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে তিন মাস ধরে চলা যুদ্ধে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েছেন তাদের সেনাসদস্যেরা। এতে অন্তত ২১ সেনা নিহত হয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল দানিয়েল হাগারি বলেন, মধ্য গাজার দুটি ভবন উড়িয়ে দিতে ইসরায়েলি সেনাসদস্যেরা বিস্ফোরক প্রস্তুত করছিলেন। এ সময় ইসরায়েলি বাহিনীর একটি ট্যাংকের কাছে রকেট–চালিত গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। একসঙ্গে গ্রেনেড আর বিস্ফোরকের বিস্ফোরণে ভবন ধসে পড়ে। এতে ভবনের ভেতরে থাকা সেনাসদস্যেরাও ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েন।

সেনাদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ইসরায়েলকে নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। তাদেরকে গাজায় অভিযান সাময়িক স্থগিত, এমনকি বন্ধও করতে হতে পারে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার ক্ষমতাসীন হামাসকে নিশ্চিহ্ন এবং শতাধিক ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্ত না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন। নেতানিয়াহুর এই দুই লক্ষ্যের কোনোটিই আদৌ অর্জন করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে ইসরায়েলিদের মধ্যে এখন সংশয় দেখা দিয়েছে।

হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলিদের পরিবার ও তাঁদের সমর্থকেরা যুদ্ধবিরতির চুক্তি করতে নেতানিয়াহু সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, হামাসের হাতে বন্দী স্বজনদের জীবিত ফেরত পাওয়ার সময় ফুরিয়ে আসছে। গতকাল সোমবার বন্দীদের স্বজনেরা ইসরায়েলি পার্লামেন্টে ঢুকে বিক্ষোভ করেন এবং তাঁদের প্রিয়জনদের মুক্ত করতে চুক্তি করার দাবি জানান।

গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায়। এতে ১ হাজার ২০০–এর বেশি ইসরায়েলি নিহত হন। এ সময় হামাস আরও প্রায় ২৫০ জনকে বন্দী করে নিয়ে যায়। গত নভেম্বরে সাত দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে হামাস শতাধিক ইসরায়েলি বন্দীকে এবং ইসরায়েল ২৪০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়।

৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে। তারা বেসামরিক নাগরিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আশ্রয়শিবির, হাসপাতাল—সর্বত্র হামলা চালায়। এতে ২৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে গাজার ৮৫ শতাংশ মানুষ।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গাজার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে এক–চতুর্থাংশ খাদ্যাভাবে পড়তে পারে।