যুদ্ধবিরতি চুক্তির এক দিন বাদেই লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ লেবাননের ছয়টি এলাকায় এ হামলা চালানো হয়। তবে ইসরায়েলের দাবি, দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় ‘সন্দেহভাজন’ ব্যক্তিদের উপস্থিতি দেখতে পেয়েছে তারা। এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ।
গতকাল বুধবার থেকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় এই চুক্তি অনুযায়ী, দক্ষিণ লেবানন থেকে নিজেদের সেনা সরিয়ে নিতে ৬০ দিন সময় পাবে ইসরায়েলি বাহিনী। এ সময় কোনো পক্ষই একে অপরের ওপর হামলা চালাতে পারবে না।
যুদ্ধবিরতির লক্ষ্য হলো, গত ১৪ মাসের লড়াইয়ে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত এলাকার যেসব বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাঁদের নিজ বাড়িতে ফেরার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। এরপরও নিজ দেশের বাসিন্দাদের সীমান্ত এলাকায় না ফেরার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। তবে দক্ষিণ লেবাননের বাসিন্দারা নিজ বাড়ি ফিরতে পারেন বলে জানিয়েছেন দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার নাবিহ বেরি।
লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ও নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, গতকাল দক্ষিণ লেবাননে ছয়টি এলাকায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের ট্যাংক। এলাকাগুলো হলো মারকাবা, ওয়াজানি, কফারচৌবা, খিয়াম, তাইবে ও মারজাইউন। এসব হামলায় মারকাবা এলাকায় দুজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সূত্র।
এই ট্যাংক হামলার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ। তবে গতকাল দক্ষিণ লেবাননে সীমান্তবর্তী এলাকার কাছে বাস্তুচ্যুত অনেককে ফিরতে দেখা গেছে। এসব এলাকায় এখনো অবস্থান করছেন ইসরায়েলি সেনারা। এ ছাড়া দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে ইসরায়েলের নজরদারি ড্রোন উড়ে যেতে দেখা গেছে।
গত বছরের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তখন থেকেই গাজার প্রতি সমর্থন জানিয়ে লেবানন থেকে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হিজবুল্লাহ। পাল্টা জবাব দিচ্ছে ইসরায়েলও। তবে গত সেপ্টেম্বর থেকে পাল্টাপাল্টি এ হামলা জোরদার হয়। ইসরায়েলের হামলায় লেবাননে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৮০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।
মাঠে লেবাননের সেনা
যুদ্ধবিরতি শুরুর পর আজ দক্ষিণ লেবাননে দেশটির সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি চলাকালে দক্ষিণ লেবাননে শুধু দেশটির সেনাবাহিনী এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের কাছে অস্ত্র রাখতে পারবেন।
লেবাননের সেনাবাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ লেবাননের লিতানি নদীর দক্ষিণে টহল দেওয়া শুরু করেছে। সেখানে তল্লাশিচৌকিও বসানো হয়েছে। তবে দক্ষিণ লেবাননের যেসব এলাকায় এখনো ইসরায়েলি বাহিনী অবস্থান করছে, সেখানে প্রবেশ করেনি তারা।
এদিকে লেবাননের সেনাবাহিনী মোতায়েনকে স্বাগত জানিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা। সীমান্তবর্তী কলায়া গ্রামে নিজ দেশের সেনাসদস্যদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন তাঁরা। খ্রিষ্টান অধ্যুষিত এই গ্রামের বাসিন্দাদের এ সময় ‘আমরা শুধু লেবাননের সেনাবাহিনী চাই’ স্লোগান দিতে শোনা যায়।