গাজার নুসাইরাত শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর জিম্মি উদ্ধার অভিযানের পরবর্তী দৃশ্য। ৯ জুন, ২০২৪
গাজার নুসাইরাত শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর জিম্মি উদ্ধার অভিযানের পরবর্তী দৃশ্য। ৯ জুন, ২০২৪

ইসরায়েলের চার জিম্মি উদ্ধার অভিযানে ২৭৪ ফিলিস্তিনি নিহত

ইসরায়েল গতকাল শনিবার গাজার নুসাইরাত শরণার্থীশিবিরে অভিযান চালিয়ে চার জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করেছে। ইসরায়েলের দুই ঘণ্টার এ অভিযানে শিশু, অন্য বেসামরিক ব্যক্তিসহ ২৭৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

নুসাইরাত শরণার্থীশিবির ঘিরে ইসরায়েলের জিম্মি উদ্ধার অভিযানে দেশটির সেনাদের সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের তীব্র বন্দুকযুদ্ধ হয়। অভিযানে ইসরায়েলের বিমানবাহিনীও অংশ নেয়।

উদ্ধার চার জিম্মি হলেন নোয়া আরগামানি (২৬), আলমোগ মেইর জান (২২), আন্দ্রেই কোজলভ (২৭) ও শ্লোমি জি (৪১)। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের নোভা সংগীত উৎসব থেকে তাঁদের অপহরণ করেছিল হামাস। এখন তাঁরা ইসরায়েলে ফিরে গেছেন।

গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলের দুই ঘণ্টার অভিযানে মোট ২৭৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইতিমধ্যে নিহত ৮৬ জনের নামও প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়টি।

তবে অভিযানের পর ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছিলেন, অভিযানে ১০০–এর কম মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এ অভিযানকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ, জটিল অভিযান’ বলেন তিনি।

অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট জানান, বিপুল গোলাগুলির মধ্যে ইসরায়েলের বিশেষ বাহিনী এ অভিযান পরিচালনা করেছে। অভিযানে আহত বিশেষ বাহিনীর এক কর্মকর্তা পরবর্তী সময়ে হাসপাতালে মারা গেছেন।

গতকালের জিম্মি উদ্ধার অভিযানে ২৭৪ ফিলিস্তিনি নিহতের দাবি সত্যি হলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটি ফিলিস্তিনিদের জন্য আরেকটি ভয়াবহ দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

চার জিম্মি পরিবারের কাছে ফেরায় ইসরায়েলের মানুষকে উৎসব করতে দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ অনেক বিশ্বনেতা জিম্মি উদ্ধারকে স্বাগত জানিয়েছেন।

কিন্তু গাজার অভ্যন্তরে অভিযানে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি বাড়ায় বিশ্বে ইসরায়েলের সমালোচনা বাড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল গতকালের জিম্মি উদ্ধার অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি লিখেছেন, গাজায় আরেকটি হত্যাকাণ্ডের খবর শোনা যাচ্ছে, এটা অত্যন্ত ভয়ংকর।

ইসরায়েলের এক মন্ত্রী বোরেলের এ অবস্থানের সমালোচনা করেছেন।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে হামাস যোদ্ধাদের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। হামাস জিম্মি করে নিয়ে আসে আরও প্রায় ২৫১ জনকে।

গত নভেম্বরে এক চুক্তির মাধ্যমে হামাস ১০৫ জিম্মিকে মুক্তি দেয়। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে এখনো প্রায় ১১৬ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যাঁদের মধ্যে সামরিক বাহিনীর সদস্য ৪১ জন।

হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার জবাবে সেই দিন থেকেই গাজায় হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজার ৮৪ জন নিহত হয়েছেন।