ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

আইসিসিতে নেতানিয়াহু ও সিনওয়ারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কৌঁসুলি করিম খান। ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং এর ধারাবাহিকতায় গাজায় চলমান যুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এ আবেদন করা হয়।

গতকাল সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সাংবাদিক ক্রিশ্চিয়ান আমানপোরকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে করিম খান এসব কথা জানান। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদনের বিষয়টি ঘোষণা দেন তিনি।

এ তালিকায় আরও নাম আছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ও হামাসের আরও দুই নেতা—সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দিয়াব ইব্রাহিম আল-মাসরি; যিনি মোহাম্মদ দেইফ নামেই বেশি পরিচিত এবং হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়া। তবে নেতানিয়াহু ও সিনওয়ারের দায় বিশেষভাবে উল্লেখ করেন আইসিসির কৌঁসুলি।

এখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির এ আবেদনের বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিসির বিচারকদের একটি প্যানেল সিদ্ধান্ত দেবেন।

করিম খান বলেন, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার ঘটনায় সিনওয়ার, হানিয়া ও দেইফের বিরুদ্ধে ‘ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, হত্যা, লোকজন জিম্মি হিসেবে নেওয়া, ধর্ষণ এবং বন্দীদের যৌন নিপীড়নের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

আইসিসির কৌঁসুলি আরও বলেন, নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করা, মানবিক ত্রাণ সরবরাহ করতে না দেওয়াসহ ক্ষুধাকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার, যুদ্ধে বেসামরিক লোকজনকে ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা।

ইয়াহিয়া সিনওয়ার

ইসরায়েলি রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হবে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশের শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে আইসিসির পদক্ষেপ গ্রহণ। এতে নেতানিয়াহু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাতারে গিয়ে পড়বেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যাঁর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আইসিসি।

আইসিসি কৌঁসুলি এমন পদক্ষেপের পথে হাঁটছেন, গত মাসে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েলের সরকার ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইসিসির কোনো ধরনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হবে ‘ঐতিহাসিক রীতিনীতির ব্যত্যয়’।

নেতানিয়াহুর এমন মন্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইসিসির কৌঁসুলি বলেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল যদি আইসিসির সঙ্গে একমত না হয়, এর এখতিয়ারের বিষয়ে তাদের আপত্তি সত্ত্বেও আদালতে বিচারকদের সামনে বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করার স্বাধীনতা তাঁদের আছে। আমি তাদের এটি করার পরামর্শ দিচ্ছি।’

উল্লেখ্য, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য নয়। তবে ২০১৫ সালে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) আইসিসিতে যোগ দেয়। এরপর গাজা, পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের ওপর এখতিয়ার দাবি করেন বৈশ্বিক আদালতটি।

রাফায় অভিযানে অনড় ইসরায়েল

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার সর্ব দক্ষিণের শহর রাফায় বড় ধরনের স্থল অভিযান চালানোর বিষয়ে নিজেদের অনড় অবস্থানের কথা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল সফররত মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানকে বিষয়টি জানিয়ে দেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্ট।

বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত না করে রাফায় বড় ধরনের স্থল অভিযানের বিরোধিতা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে রাফায় অবশিষ্ট হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল এবং জিম্মি উদ্ধারে রাফায় অভিযানে জোর দিয়ে আসছে ইসরায়েলি সরকার।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সুলিভানকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘হামাসকে নির্মূল করা পর্যন্ত রাফায় স্থল অভিযান বিস্তৃত করা এবং জিম্মিদের উদ্ধারের বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি যুক্তরাষ্ট্র।

ইসরায়েলের হামলার মুখে রাফার লাখ লাখ ফিলিস্তিনির ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আরব ও পশ্চিমা দেশগুলো। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, সম্ভাব্য বড় ধরনের হামলার আশঙ্কায় ৬ মে থেকে ৮ লাখ ১০ হাজার ফিলিস্তিনি রাফা ছেড়ে গেছেন।

এদিকে গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় গাজায় আরও ১০৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৭৬ জন। এ নিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় ৩৫ হাজার ৫৬২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৯ হাজার ৬৫২ জন।

মাঝে গাজায় ইসরায়েলের হামলার তীব্রতা কিছুটা কমে আসে। এতে ২৪ ঘণ্টায় প্রাণহানির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছিল। তবে গত কয়েক দিন আবারও হামলার তীব্রতা ও পরিধি বাড়ায় ইসরায়েল। এতে দৈনিক প্রাণহানি ১০০ ছাড়াল।