সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের স্ত্রী বিচ্ছেদ চেয়েছেন। গণমাধ্যমে প্রচারিত এমন খবর নিয়ে কথা বলেছে ক্রেমলিন। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানিয়ে দিয়েছেন, এ খবরের সত্যতা নেই।
গতকাল সোমবার তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে বলা হয়, আসমা আল–আসাদ তাঁর স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ চান। তিনি রাশিয়া ছেড়ে যাচ্ছেন। সিরিয়া থেকে পালিয়ে সন্তানসহ এই দম্পতি এখন রাশিয়ার মস্কোয় রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন।
৮ ডিসেম্বর দামেস্কে বিদ্রোহীদের হাতে বাশার আল-আসাদের টানা ২৪ বছরের শাসনামলের পতন হয়। তিনি মস্কোয় পালিয়ে যান। আগে থেকেই সন্তানদের নিয়ে মস্কোয় ছিলেন আসমা। বাবা আর ছেলে মিলে আল-আসাদ পরিবার টানা ৫৩ বছর ধরে সিরিয়া শাসন করেছে।
রোববার তুরস্কের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে মস্কোয় নানা বিধিনিষেধের বেড়াজালে বাশার আল-আসাদকে থাকতে হচ্ছে বলেও খবর প্রকাশ হয়। সিরিয়ার সাবেক ফার্স্ট লেডি আসমা মস্কো ছেড়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ফিরতে চান বলেও জানান।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। জবাবে পেসকভ বলেন, ‘না, বাস্তবতার সঙ্গে এসব মেলে না।’বাশার আল-আসাদের চলাফেরা মস্কোয় সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে এবং তাঁর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে—এমন খবরও নাকচ করে দিয়েছেন দিমিত্রি পেসকভ।
রাশিয়া বাশার আল-আসাদের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। এমনকি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময়ও আসাদ সরকারকে সামরিক সহায়তা দিয়ে এসেছে মস্কো।
সিরিয়ার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব রয়েছে ৪৯ বছর বয়সী আসমার। তাঁর জন্ম ১৯৭৫ সালে, লন্ডনের এক সিরীয় পরিবারে। তাঁর বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা সবই লন্ডনে।
২০০০ সালে ২৫ বছর বয়সে পাকাপাকিভাবে সিরিয়ায় চলে আসেন আসমা। ওই বছরই বাবা প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর সিরিয়ায় নতুন প্রেসিডেন্ট হন তরুণ বাশার আল-আসাদ। এর কয়েক মাস পরই বাশার আল-আসাদের সঙ্গে আসমার বিয়ে হয়।
তবে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড লামি আগেই বলেছেন, আসমাকে যুক্তরাজ্যে ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে না। এ মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা নিশ্চিত করছি যে আসমার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকায় তাঁকে যুক্তরাজ্যে স্বাগত জানানো হবে না।’
সিরিয়ার এক সময়ের ফার্স্ট লেডি আসমাকে নিয়ে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের বরাবরই আগ্রহ ছিল। ২০১১ সালে ভোগ সাময়িকীর প্রচ্ছদে এসে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন আসমা। তবে তাতে তাঁকে ‘মরুর গোলাপ’ বলা হয়েছিল। যদিও ভোগের ওয়েবসাইট থেকে পরে প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেওয়া হয়।
এর মাসখানেক পরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে চরম দমন–পীড়ন চালিয়ে তুমুল সমালোচিত হন বাশার আল-আসাদ। শুরু হয় সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ। স্বামীর এমন কাজে নিশ্চুপ থাকায় সমালোচনার মুখে পড়েন আসমাও।
সিরিয়ার সংবাদমাধ্যম ২০১৮ সালে আসমার স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানায়। বছরখানেকের মধ্যে তিনি পুরোপুরি সেরে ওঠেন বলেও জানা যায়।
তবে এ বছরের মে মাসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের দপ্তর জানায়, লিউকেমিয়ায় (রক্ত বা অস্থিমজ্জার ক্যানসার) ভুগছেন আসমা। চিকিৎসা চলছে তাঁর। এ জন্য তিনি সাময়িকভাবে জনসম্পৃক্ততা এড়িয়ে চলছেন।
পরবর্তী সময়ে বাশার আল-আসাদের পতনের পর জানা যায়, নভেম্বরের শেষভাগ থেকেই তিন সন্তানকে নিয়ে মস্কোয় ছিলেন সিরিয়ার সাবেক এই ফার্স্ট লেডি।