ফিলিস্তিন ও লেবাননে যুদ্ধ বন্ধে সমঝোতার লক্ষ্যে শেষ চেষ্টা চালাতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। তবে এতে রাজি করাতে ইসরায়েল ও অন্য আঞ্চলিক পক্ষগুলোর ওপর যে প্রভাব বাইডেন প্রশাসনের ছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় সেটা আর নেই বলে মনে করা হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে শান্তি আলোচনার জন্য মাসের পর মাস দফায় দফায় মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। বড় পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা এখন সম্ভবত আলোচনার পক্ষগুলোর অনীহার মুখে পড়তে পারেন। তার চেয়ে বরং পক্ষগুলো জানুয়ারিতে ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণ পর্যন্ত অপেক্ষার পথ বেছে নিতে পারে। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এবং নিরপেক্ষ বিশ্লেষকেরা এমনটাই মনে করছেন।
নির্বাচনী প্রচারে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরানোর অঙ্গীকার করেছিলেন ট্রাম্প। তবে কীভাবে শান্তি ফেরাবেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকে বিবেচনায় নিলে ধরে নেওয়া যায়, তিনি আরও শক্তভাবে ইসরায়েলের পক্ষ নিতে পারেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এই আঞ্চলিক মিত্রকে সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে বাইডেনের কড়া সমর্থনকেও ছাড়িয়ে যেতে পারেন তিনি।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমরা গাজা ও লেবাননে যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং মানবিক সহায়তা ব্যাপকভাবে বাড়াতে অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাব। আগামী ২০ জানুয়ারি দুপুর পর্যন্ত এসব নীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করা আমাদের দায়িত্ব।’
তবে বাইডেনের আমলের শেষ পর্যায়ে এসে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও আরব নেতারা ডেমোক্র্যাট এই প্রেসিডেন্টের কথায় খুব একটা কান দেবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। তার চেয়ে বরং তাঁর রিপাবলিকান উত্তরসূরির পদক্ষেপের জন্য তাঁরা অপেক্ষা করবেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ মধ্যপ্রাচ্যকে খাদের কিনারে ঠেলে দিয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইউএস প্রোগ্রামের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ব্রায়ান ফিনুকেন বলেন, তাদের (বাইডেন প্রশাসন) উল্লেখ্যযোগ্য সেই প্রভাব আর নেই। লোকজন এখনো হয়তো তাদের ফোনে সাড়া দেবেন, কিন্তু সবাই নতুন প্রশাসনের অপেক্ষায় থাকবেন। এই প্রশাসনের নীতি ও অগ্রাধিকার ভিন্ন হবে।
এদিকে, মঙ্গলবারের নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বিপক্ষে ট্রাম্প জয় পাওয়ার পর নিজেদের ভবিষ্যৎ ক্ষতি যত কমিয়ে আনা যায়, সে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন আরব ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের আলোচকদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা। ফিলিস্তিন নিয়ে ট্রাম্প কী নীতি নেবেন, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন তাঁরা। মিসরের গোয়েন্দা সূত্রগুলো এমনটা জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ট্রাম্প যে নেতানিয়াহুর পছন্দের প্রার্থী ছিলেন, এ বিষয়ে তেমন সন্দেহ নেই বললেই চলে। ট্রাম্পের জয়কে তিনি ‘ঐতিহাসিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। নেতানিয়াহু তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টকে বরখাস্ত করেছেন। এতে বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলে তাদের একজন পছন্দের সঙ্গীকে হারাল বলে মনে করা হয়।
জনস হপকিনস স্কুল ফর অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক লরা ব্লুমেনফেল্ডের ধারণা, ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের আগে গাজায় ত্রাণসরবরাহ বাড়াতে নেতানিয়াহু সামান্যই পদক্ষেপ নেবেন। তাঁর চেয়ে বরং ট্রাম্পকে শান্ত রাখতে কী করা যায়, সে বিষয়ে তিনি মনোযোগ দেবেন।