ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে আরও একবার বোমা পড়ল যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায়। হামলার পরই সামার আল-ব্রেইম ও সাহার আল-ব্রেইম বুঝতে পারলেন, তাঁদের মা নিখোঁজ। এরপর দ্রুত দুই বোন ছুটে গেলেন হামলাস্থলে। সেখানে গিয়ে কান্নাভেজা চোখে মায়ের নাম ধরে ডাকতে থাকলেন। আহাজারি করতে করতেই পাগলের মতো ধ্বংসস্তূপ সরাতে লাগলেন তাঁরা। কিন্তু ধ্বংসস্তূপের কোথাও পেলেন না মায়ের খোঁজ।
ধ্বংসস্তূপে নির্বাক বসে থাকা সামারকে প্রশ্ন করতেই বললেন, ‘মনে হচ্ছে, একটা দুঃস্বপ্নের ভেতরে আছি, যেন আমরা স্বপ্নে আছি। এটা একটা স্বপ্ন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, যেন স্বপ্ন থেকে জাগরণে ফিরতে পারি এবং জানতে পারি, এটা শুধু স্বপ্নই ছিল। এটা সত্য নয়।’ তাঁর মতো গাজার অন্যরা কেন এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেই প্রশ্ন করলেন। বললেন, ‘কী এমন করেছি যে এটা আমাদের প্রাপ্য ছিল?’
গতকাল রোববার রাতে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসে এই হামলা চালায় ইসরায়েল। সামার আল-ব্রেইম বলেন, শিশুরা তখন ঘুমাচ্ছিল। কিন্তু হামলায় নিষ্পাপ শিশুদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।
সামারের বোন সাহার আল-ব্রেইম জানান, হামলায় তাঁর চাচারা সপরিবার নিহত হয়েছেন। তাঁরও মায়ের সঙ্গে থাকার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে যাওয়ার জন্য কোনো গাড়ি না পাওয়ায় তাঁর যাওয়া হয়নি।
মা আমিরা আল-ব্রেইমের খোঁজে ধসে পড়া কংক্রিট সরাতে সরাতে সাহার আল-ব্রেইম বলেন, ‘আমার মা এখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেছে। গাজার আর কোনো এলাকায় থাকা নিরাপদ নয়।’
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত প্রায় আট মাসে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজায় ৩৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হাজারো মানুষ চাপা পড়েছেন ধ্বংসস্তূপে।
মায়ের নাম ধরে আহাজারি করতে করতেই সাহার বলেন, ‘আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন এই যুদ্ধ বন্ধ হয়। আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি। সব প্রিয়জন হারিয়েছি। আমাদের আর হারানোর কিছু নেই।’
ভেজা চোখে সামার বলেন, ‘তারা (ইসরায়েল) আমাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। তারা যতই হত্যা-ধ্বংসযজ্ঞ চালাক ও যত কষ্ট দিক না কেন আল্লাহ যদি চান, তাহলে শেষ পর্যন্ত আমরাই বিজয়ী হব।’