ইয়েমেনে সহিংসতা আবারও বেড়েছে। গত কয়েক দিনে সানা ও সাদা শহরে হুতিদের ওপর হামলা চলেছে। মানবিক সংকটে থাকা দেশটি আরও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।
গত সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেশ কয়েকটি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায় হুতি বিদ্রোহীরা। আবুধাবির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন বর্ধিত অংশেও হামলা হয়। এরপরই ইয়েমেনে উত্তেজনা বেড়েছে।
উত্তেজনা নিরসনে কয়েক সপ্তাহ ধরে মধ্যস্থতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘ। ইয়েমেন সংকটকে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। সাত বছর ধরে চলা সংঘর্ষ ও সহিংসতা আরব বিশ্বের দরিদ্র এই দেশে কী প্রভাব ফেলেছে, আল–জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হয়েছে।
যুদ্ধ ও সংঘর্ষের কারণে নিহত মানুষের সঠিক সংখ্যা জোগাড় করা কঠিন। জাতিসংঘের হিসাবে সংঘর্ষে গত বছরের শেষ পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৭ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। গত বছরের শেষ দিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম বলেছে, ৬০ শতাংশ প্রাণহানি হয়েছে যুদ্ধ ও সংঘর্ষের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ এবং বিভিন্ন রোগে। আর বাকি প্রাণহানি হয়েছে বিমান হামলা এবং সম্মুখসারির যুদ্ধে। জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক এ সংস্থা আরও বলেছে, অপুষ্টি, দুর্বলতা ও সংঘাতের কারণে সৃষ্টি সামাজিক সংকটের কারণে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলছে, ইয়েমেনের ১ কোটি ৬২ লাখ মানুষ অথবা জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ খাদ্যসংকটে রয়েছে। ৫০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে আর ৫০ হাজার মানুষ এর মধ্যেই দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির শিকার।
ইয়েমেনের সহিংসতা শুরুর পর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আর এতেই খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, এমন নারীদের অপুষ্টিও বড় উদ্বেগের কারণ। ডব্লিউএফপি সতর্কতা জারি করে বলেছে, এই দুই দল অপুষ্টির শিকার।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) হিসাব বলছে, সহিংসতার কারণে ৪৬ লাখ ইয়েমেনি দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। এ বছরের প্রথম দুই সপ্তাহে ৩ হাজার ৪৬৮ জন বা ৫৭৮ পরিবার গৃহহীন হয়েছে।
ইয়েমেনের ঘরহারা এসব মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। ইউএনএইচসিআরের হিসাব বলছে, ইয়েমেনের ৬৭ শতাংশ জনগণ ঘরহীন হয়ে পড়েছে। আর ২৬ লাখ মানুষ খাদ্যঝুঁকিতে রয়েছে। ঘরহারা এসব মানুষের ৭৯ শতাংশ নারী ও শিশু।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইয়েমেনের সহিংসতা অবসানের কোনো সম্ভাবনা নেই। দেশটিতে ভবিষ্যৎ খুবই অনিশ্চিত। এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘ সতর্কতা জারি করে বলেছে, ইয়েমেনে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া সব দেশই জেতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের ইয়েমেনে নিযুক্ত বিশেষ দূত হ্যানস গ্রান্ডবার্গ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বলেছেন, সাত বছরের যুদ্ধে সব পক্ষ একে অন্যের ক্ষতি করেছে। যুদ্ধের এই ময়দানে কোনা সমাধানের পথ দেখা যাচ্ছে না।