সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে লাখো মানুষ ঘর ছেড়ে পালিয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুর্দিনিয়ন্ত্রিত এই এলাকায় হামলা অব্যাহত রেখেছে তুরস্ক।
জাতিসংঘ বলছে, সিরিয়ার জনগণ হাসাকেহ ও তাল তামার শহরের স্কুলসহ অন্যান্য ভবনে আশ্রয় নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিরিয়ার ৬৪ হাজার মানুষের পালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল। গতকাল শুক্রবার সে সংখ্যা লাখের ঘরে পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর তুরস্ক গত বুধবার এ হামলা চালায়।
বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১১ জন বেসামরিক নাগরিক মারা গেছেন। মানবাধিকার সংরক্ষণ দলগুলো বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে।
কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স (এসডিএফ) এবং তুর্কিপন্থী দলগুলোর অসংখ্য যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। তুরস্ক জানিয়েছে, তাদের হামলায় ২৭৭ জন কুর্দি যোদ্ধা নিহত হন। তুরস্কের সেনাবাহিনী প্রথম কোনো কুর্দি সৈন্যের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা তুরস্ককে আন্তসীমান্ত হামলা শুরুর সবুজ সংকেত দিয়েছে।
২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের ফলে এই অঞ্চলের বেশির ভাগ অংশ সিরিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। ২০১৫ সাল থেকে এসডিএফ এ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। ২০১৪ সাল থেকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন সেনাবাহিনীর মূল সহযোগী ছিল এসডিএফ।
তুর্কি বাহিনী কুর্দি মিলিশিয়াদের সাফ করে একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরির পরিকল্পনা করছে। এখানে সিরিয়ার শরণার্থীদেরও জায়গা দেওয়া হবে। কুর্দি-নেতৃত্বাধীন বাহিনী এ হামলা প্রতিহত করার অঙ্গীকার করেছে।
গতকাল শুক্রবার প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ‘যে যা-ই বলুক না কেন, আমরা থামব না।’
এই অঞ্চলে হাজার হাজার আইএস যোদ্ধা এবং তাদের আত্মীয়স্বজন কুর্দিনিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে কারাগার এবং শিবিরে দিন কাটাচ্ছেন। এসডিএফ বাহিনী এখনো এসব কারাগারের নিয়ন্ত্রণে আছে। এসব বন্দীর ভাগ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
গতকাল আইএস জানিয়েছে, তারা সীমান্তবর্তী শহর কামিশ্লির একটি গাড়িতে বোমা স্থাপন করেছিল। বোমা বিস্ফোরণে বেসামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর ছয় সদস্য নিহত হয়েছেন। মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, কোবান এলাকায় মার্কিন ঘাঁটির কাছে একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সিরিয়া যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) বলেছে, তুরস্কের সেনাবাহিনী রাস আল-আইনের নিকটবর্তী দুটি এবং তেল আবিয়াদ শহরের নিকটবর্তী পাঁচটি গ্রাম দখলে নিয়েছে। অন্যদিকে সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনীর মুখপাত্র বলেছেন, যোদ্ধারা আশপাশের গ্রাম দখলের পর শহরও ঘিরে ফেলেছেন।
তবে তুর্কি সামরিক বাহিনী যখন জানিয়েছিল, তারা অভিযানের পরিকল্পনা করছে, তখন কুর্দি সূত্র এবং অবজারভেটরির কর্মীরা বলেছেন, হামলায় তেমন অগ্রগতি হয়নি।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতভর অভিযানে ৪৯ কুর্দি যোদ্ধা নিহত হয়েছে। এ নিয়ে প্রায় ২৭৭ জন কুর্দি যোদ্ধা নিহত হলেন। এ ছাড়া সিরিয়ার কামিশ্লি এলাকায় তুরস্ক ও এসডিএফ একে অপরের ওপর হামলা চালিয়েছে। এসডিএফ মুখপাত্র বলেন, পুরো সীমান্ত এলাকায় এই গুলিবিনিময় হচ্ছে।