লেবানন ও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। আর্থিক সংকটে জর্জরিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী সোমবার এ কথা বলেন। তবে তাঁর এমন দাবি অস্বীকার করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেউলিয়া হয়নি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
গত সোমবার লেবাননের আল-জাদিদ টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উপপ্রধানমন্ত্রী সাদেহ আল-সামি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেউলিয়া হয়েছে। এরই সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্র হিসেবে লেবাননও দেউলিয়া হয়ে গেছে। ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েছে, এখন কীভাবে জনগণের ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়, আমরা সেই চেষ্টাই করব।’
উপপ্রধানমন্ত্রী সাদেহ আল-সামি আরও বলেন, দেশের যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তা সবার মধ্যে ভাগাভাগি করে দেওয়া হবে। এর মধ্যে রাষ্ট্র যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংক এবং আমানতকারীরা। ক্ষতি ভাগাভাগি করে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কোনো মতবিরোধ নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তবে উপপ্রধানমন্ত্রী সাদেহ আল-সামির দাবি অস্বীকার করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর রিয়াদ সালামেহ। গত সোমবার গভর্নর রিয়াদ বলেন, তিনি ৩০ বছর ধরে যে প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বে রয়েছেন, সেটি দেউলিয়া হয়নি। আর্থিক খাতে ক্ষতি সত্ত্বেও এখনো আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক ভূমিকা পালন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কয়েক দশকের দুর্নীতি ও সরকারি ভুল নীতির কারণে তিন বছর ধরে আর্থিক বিপর্যয় চলছে লেবাননে। মুদ্রার মানও ৯০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। ব্যাংক থেকে অর্থ তুলতে পারছে না মানুষ। সম্প্রতি সরকার একটি খসড়া আর্থিক উদ্ধার পরিকল্পনা করে দেখে, আর্থিক খাতে সাত হাজার কোটি ডলার ঘাটতি রয়েছে।
মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় খাদ্য, পানি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো নিত্য খরচ মেটাতে পারছে না মানুষ। জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয় স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। নিত্যপণ্যের দামও আকাশচুম্বী। জাতিসংঘের হিসাবে মোট জনসংখ্যার ৮২ শতাংশই এখন দরিদ্র। দেশটির আনুমানিক ৪০ শতাংশ মানুষ কর্মহীন।
করোনাভাইরাস মহামারি ও ২০২০ সালে রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর সংকট আরও বাড়ে। বৈরুতের ওই বিস্ফোরণে ২১৬ জন মানুষ প্রাণ হারায়। আহত হয় কয়েক হাজার মানুষ। রাজধানীর একটা অংশ একেবারে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়। তবে অর্থনীতি ধসে গেলেও দেশটিতে এখনো আগের সরকার ক্ষমতায়।