লেবাননে বিক্ষোভের মুখে সরকার পতন

বৈরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালানো হলে তারা দৌড়ে পালায়। ছবি: রয়টার্স
বৈরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালানো হলে তারা দৌড়ে পালায়। ছবি: রয়টার্স

দেশজুড়ে দুই সপ্তাহের বিক্ষোভের মধ্যে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি গতকাল মঙ্গলবার তাঁর সরকারের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এর আগেও তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুবার পদত্যাগ করেছিলেন। আজ বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির পদত্যাগের ঘোষণায় বিক্ষোভকারীরা উল্লাস প্রকাশ করেন। দুর্নীতি ও গোষ্ঠীতন্ত্রের বিরুদ্ধে ১৭ অক্টোবর থেকে তাঁরা বিক্ষোভ করছিলেন।

পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে সাদ হারিরি বলেন, ‘সংকট উত্তরণে বড় একটি ধাক্কা দেওয়া আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। আমি বাবদা প্যালেসে সরকারের পদত্যাগপত্র জমা দিতে যাচ্ছি।’ তিনি জানান, পরিবর্তনের দাবিতে সড়কে অবস্থান নেওয়া লেবাননের বহু মানুষের ইচ্ছা পূরণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

হারিরির পদত্যাগপত্র জমা দেওয়াকে আপাতভাবে বিক্ষোভকারীদের বড় জয় হিসেবে ধরা হচ্ছে। তবে প্রেসিডেন্ট পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলে নতুন সরকার গঠনে দেশটির পার্লামেন্টকে জটিল অবস্থায় পড়তে হবে।
হারিরির পদত্যাগের ঘোষণা এমন সময়ে এল যখন তাঁর যৌথ সরকারে নিজেদের মধ্যেও সম্পর্ক ততটা ভালো নয়। বেশ কিছু পদে রদবদল আনার চেষ্টা করা হলেও তা কাজে লাগেনি। সড়কে বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় দেশব্যাপী। এমনকি বিক্ষোভকারী ও বিক্ষোভ বিরোধীদের মধ্যেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

টেলিভিশনে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে গতকাল হারিরি বলেন, তাঁর পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তিনি দেশকে রক্ষা করতে রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানান।

এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় লেভান্ট ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সামি নাদের বলেন, সমাধানের দরজা খুলে দিচ্ছেন হারিরি। কারণ, এই সংকট থেকে বেরোনোর একমাত্র সম্মানজনক উপায় হচ্ছে পদত্যাগ করা।

হারিরির ঘোষণার পর হাজার হাজার উৎফুল্ল বিক্ষোভকারী দেশটির উত্তরাঞ্চলের শহর ত্রিপোলিতে সমবেত হন। দক্ষিণাঞ্চলের শহর সিদনের পাশাপাশি ত্রিপোলিতেও সুন্নি প্রধানমন্ত্রীর শক্ত অবস্থান রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ত্রিপোলির আল-নূর স্কয়ারে সমবেত হয়ে লেবাননের পতাকা নাড়াতে থাকেন। সেখানে তিমা সামির (৩৫) নামের এক নারী বলেন, ‘পদত্যাগকে স্বাগত জানাই, তবে এটা যথেষ্ট নয়। আমরা পুরো সিস্টেমে পরিবর্তন চাই।’

পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি। ছবি: এএফপি

সিদনের সেন্ট্রাল স্কয়ারে লোকজন গান গেয়ে ও নেচে উল্লাস প্রকাশ করেন। দোকানগুলো থেকে বিনা মূল্যে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। আহেদ মাদি নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, শহরের এই উৎসবমুখর পরিবেশ বিশেষভাবে প্রতীকী। তিনি বলেন, সাদ হারিরি এই শহরের, এই শহর সব সময় তাঁকে আলিঙ্গন করেছে। কিন্তু আজ, মানুষ পরিবর্তন চায়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গতকাল লেবাননের রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি ‘জরুরি ভিত্তিতে’ সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৩ দিন ধরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ এবং জাতীয় ঐক্যের প্রকাশ একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। লেবাননের জনগণ দক্ষ ও কার্যকর সরকার চায়, অর্থনৈতিক সংস্কার এবং জাতিগত দুর্নীতির শেষ চায়।

হারিরির শীর্ষ মিত্রদের অন্যতম ফ্রান্স তাঁর পদত্যাগের ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, সংকট আরও ঘনীভূত হবে।

হারিরির বক্তব্যের আগে বিক্ষোভ বিরোধীরা বিক্ষোভকারীদের ওপর দুই জায়গায় হামলা চালান। ওই সময় তারা শিয়া আন্দোলনের দুই নেতা হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ ও আমাল প্রধান নাবিহ বেরির নামে স্লোগান দেন।
একজন বিক্ষোভকারী বলেন, রাজনৈতিক নির্দেশেই এই হামলা চালানো হয়েছে। এটা স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। আমাল ও হিজবুল্লাহর নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁরা কেউই রেহাই পাবেন না। নিজেদের শহরেও না।

মাসের পর মাস ধরে ধসে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে হারিরি গত সপ্তাহে অর্থনৈতিক সংস্কারের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেন। তবে সেই পদক্ষেপ বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে ব্যর্থ হয়।