ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে খানিকটা বিরোধী অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও অন্যদের যুদ্ধবিরতির উদ্যোগে কাজ করতে প্রস্তুত দেশটি। আর চীন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র তার দায় এবং একটি অবস্থান নিক।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলার ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদে দুটি রুদ্ধদার বৈঠকের পর গতকাল এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। বৈঠকে জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, এ সংঘাত থামাতে যুক্তরাষ্ট্র তার কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো ব্যবহার করে নিরলস কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের পূর্ণ অধিকার রয়েছে নিরাপদে বসবাসের।’
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রকাশ্য বিবৃতি চাইছে বেশ কয়েকটি দেশ। কিন্তু এতে বারবার বাধা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে বিবৃতি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ সংকট সমাধানে একটি বিবৃতি দিতে অন্য দেশগুলোকে রাজি করাতে আবারও চেষ্টা চালাবে চীন।
বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা তাদের দায় নিক, একটি স্পষ্ট অবস্থান নিক। এ সংকট সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মহল যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার সঙ্গে কাজ করুক যুক্তরাষ্ট্র।’ নিরাপত্তা পরিষদের এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছে চীন।
বৈঠকে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালকি বলেন, প্রতিবারই ইসরায়েল একজন বিদেশি নেতাকে ডেকে তাদের পক্ষে কথা বলায়। এর মধ্যে দিয়ে ফিলিস্তিনি হত্যার বিষয়ে আরও উৎসাহ পায় ইসরায়েল।
নিরাপত্তা পরিষদের এ বৈঠকে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলিয়াড এরডান বলেন, হামাসের হামলার জবাবে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল তার শিশুদের রক্ষার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে। আর হামাস তার রকেট রক্ষার জন্য শিশুদের ব্যবহার করছে।’
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে আন্তর্জাতিক মহলকে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে চীন। কিন্তু আরব লিগ ভিন্ন পথে হাঁটছে। কায়রোভিত্তিক ২২টি দেশের এ জোট চাইছে, সংঘাত থামাতে যুক্তরাষ্ট্র আরও কাজ করুক। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আরব লিগের এ অবস্থান তুলে ধরেছেন সংগঠনটির দূত মাজেদ আবদেল ফাতাহ আবদের আজিজ।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘর্ষের শুরু গত সপ্তাহে। জেরুজালেমের আল আকসায় পবিত্র জুমাতুল বিদাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। বলা হচ্ছে, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় সংঘর্ষের ঘটনা। বড় ধরনের সংঘর্ষের সূচনা হয় গত সোমবার পূর্ব জেরুজালেমে। সেই সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।
ইসরায়েলের হামলায় গাজা, পশ্চিম তীরসহ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন এলাকায় নারী-শিশুসহ প্রায় ২০০ মানুষ নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫৫টিই শিশু রয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি। আর ফিলিস্তিনিদের হামলায় এ পর্যন্ত ২ শিশুসহ ১০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।