ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাতেরও সবচেয়ে খারাপ যুগগুলোর একটির বিদায় ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ শতেয়াহ।
তবে ফিলিস্তিনি নেতারা আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলছেন, ইসরায়েলে ক্ষমতার পালাবদল হলেও নতুন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট পূর্বসূরি নেতানিয়াহুর মতোই কট্টর ডান ইহুদি অ্যাজেন্ডা (ফিলিস্তিনিদের উৎখাত) সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। খবর এএফপি ও আল–জাজিরার।
মোহাম্মাদ শতেয়াহ আজ সোমবার বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ১২ বছর পর নেতানিয়াহুর বিদায়ে ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাতের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময়ের একটির অবসান হয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সাপ্তাহিক বৈঠক সামনে রেখে এই মন্তব্য করেন তিনি।
আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, নেতানিয়াহু যুগের অবসান ঘটলেও ফিলিস্তিনিদের দুঃখ–দুর্দশা দূর হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী নন ফিলিস্তিনিরা। ক্ষমতার এই বদলকে এরই মধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কার্যালয় গত রোববার ইসরায়েলের পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত আস্থা ভোটকে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে আখ্যায়িত করেছে। আর অবরুদ্ধ গাজার ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী বিভিন্ন গোষ্ঠী ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। ২০০৭ সাল থেকে এ উপত্যকাকে নৌ, আকাশ ও স্থলপথে অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা বিষয়ে ইসরায়েল তার অবস্থান না বদলালে বেনেটের নব্য জোট সরকারকে ‘পরিবর্তনের সরকার’ আখ্যায়িত করা হবে অযথাযথ।
উগ্র জাতীয়তাবাদী ইয়ামিনা দলের নেতা বেনেট নিজেকে নেতানিয়াহুর চেয়ে ‘অধিকতর ডান’ বলে আখ্যায়িত করে বলেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে ইসরায়েলের জন্য আত্মঘাতী। অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখারও ডাক দিয়েছেন তিনি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নাফতালি বেনেট ইসরায়েলিদের ঐক্যবদ্ধ করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁর সরকার সব মানুষের জন্য কাজ করবে। তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার হবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার এবং লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানো।
ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে নতুন জোট সরকার গঠন নিয়ে বিতর্কের পর রোববার ভোট হয়। এতে বেনেটের নতুন জোট সরকারের পক্ষে পড়ে ৬০ ভোট। নেতানিয়াহুর পক্ষে পড়ে ৫৯ ভোট।
নেসেটের আস্থা ভোটে জয়ী হওয়ায় জোট সরকারের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নাফতালি বেনেট। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর ১২ বছরের ক্ষমতার অবসান হয়।
নতুন প্রধানমন্ত্রী বেনেটকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও স্থায়ী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার প্রত্যাশায় আছেন বলে অভিনন্দনবার্তায় জানিয়েছেন।
বেনেট ইসরায়েলের স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কমান্ডো। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ কার্যক্রমে যুক্ত মূল সংগঠনের প্রধান ছিলেন তিনি।
ফিলিস্তিনবিরোধী উগ্র ও বিতর্কিত বক্তব্যের জন্যও বেনেট আলোচিত-সমালোচিত।
পার্লামেন্টে বেনেটের দলের মাত্র ৬টি আসন থাকলেও গত মার্চে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া দল ইয়েস আতিদের সরকার গঠনের জন্য তাঁর সমর্থন জরুরি হয়ে পড়ে। ইয়েস আতিদ নেতা ইয়ার লাপিদের সঙ্গে বেনেটের সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ৪ বছর মেয়াদের এ সরকারে প্রথম দুই বছর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন বেনেট। পরের দুই বছর প্রধানমন্ত্রী হবেন লাপিদ।
এদিকে বেনেটের জোট যাতে সরকার গঠন করতে না পারে, সে জন্য সব চেষ্টাই চালিয়ে আসছিলেন নেতানিয়াহু। এ জোটকে ইসরায়েলের জন্য বিপজ্জনক হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। নেতানিয়াহু তাঁর প্রজন্মের সবচেয়ে প্রভাবশালী ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ। গত ২৩ মার্চের নির্বাচনের পর তিনি সরকার গঠনে ব্যর্থ হন।
পার্লামেন্টে জোট সরকার গঠিত হওয়ায় নেতানিয়াহু এখন বিরোধী দলের নেতা হিসেবে থাকবেন। বিরোধী দলে গেলেও দ্রুতই জোট সরকারের পতন ঘটাবেন বলে আগেই হুমকি দিয়ে রেখেছেন নেতানিয়াহু। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা আছে। এ মামলা এখন গতি পেতে পারে।