ক্ষমতা হারানোর আভাস পেয়ে তা ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত নতুন জোট সরকার ঠেকাতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন তিনি। জোট সরকার নিয়ে তিনি সতর্ক করেছেন। নেতানিয়াহু বলেছেন, প্রস্তাবিত এই জোট সরকার ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি হবে। আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
নেতানিয়াহুর সরকারের যবনিকা টানতে ইসরায়েলের বিরোধী দলগুলো চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে বলে খবর বেরিয়েছে। এ চুক্তিতে সমর্থন না দিতে ও প্রস্তাবিত নতুন জোট সরকারে যোগ না দিতে ইসরায়েলের ডানপন্থী রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।
ডানপন্থী রাজনীতিকদের উদ্দেশ করে নেতানিয়াহু গতকাল রোববার বলেন, ‘বামপন্থী সরকার গঠন করবেন না। এ ধরনের সরকার ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের জন্য একটি বিপদ।’
ইসরায়েলের মধ্যপন্থী দল ইয়েস আতিদের নেতা ইয়ার লাপিড জোট সরকার গঠনের লক্ষ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা নাফতালি বেনেটের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে চলেছেন বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়। গতকাল এ চুক্তির পক্ষে অবস্থান জানিয়েছে বেনেটের দল, যাদের ছয়টি আসন ইসরায়েলে জোট সরকার গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
গত মার্চে অনুষ্ঠিত ইসরায়েলের জাতীয় নির্বাচনে আসনের দিক দিয়ে নেতানিয়াহুর ডানপন্থী দল লিকুদ পার্টির পরেই রয়েছে লাপিডের দল ইয়েস আতিদ। লাপিডকে সরকার গঠনের জন্য ২৮ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের ১১ দিনের হামলায় ওই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়। ওই হামলার জের ধরে লাপিডের জোট–শরিক হওয়ার দৌড়ে থাকা আরব ইসলামিস্ট ইউনাইটেড আরব লিস্ট আলোচনা থেকে বেরিয়ে যায়।
এখন জোট সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন জোগাড়ে লাপিডের হাতে আছে আর মাত্র দুদিন। শেষ সময়ে এসে উগ্র জাতীয়তাবাদী বেনেটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন তিনি। সম্ভাব্য এই চুক্তি অনুযায়ী ১২০ আসনের ইসরায়েলি পার্লামেন্টে মাত্র ছয় আসন নিয়েই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন নাফতালি বেনেট।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, উভয় পক্ষ যে চুক্তিতে সম্মত হয়েছে, সেখানে আগামী দুই বছরের জন্য বেনেট ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর মেয়াদের বাকি দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন ইয়ার লাপিড।
বিবিসি বলছে, এক যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকা নেতানিয়াহুর বিরোধীদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের মিল খুব সামান্য হলেও একটি জায়গায় তাঁরা সবাই মিলেছেন। প্রত্যেকেই নেতানিয়াহুর শাসনের অবসান চাইছেন। গত শনিবার রাতে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি বেনেট ও অন্যান্য দলের নেতাদের ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয়। তিন দফায় প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় তারা। কিন্তু সেই প্রস্তাবে আর সাড়া মেলেনি।
নতুন জোট সরকার গঠনের জন্য লাপিডের হাতে আগামী বুধবার পর্যন্ত সময় আছে। যদি তিনি নতুন জোট সরকার গঠন করতে সক্ষম হন, তাহলে ইসরায়েলে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সবচেয়ে দীর্ঘ শাসনের অবসান ঘটবে।
৭১ বছর বয়সী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় বিচার চলছে। বিরুদ্ধ জোটে গিয়ে তাঁকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে গতকাল দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের সমর্থন নেন বেনেট।