কাতারের শ্রম আইন সংশোধন করে সম্প্রতি পাস হওয়া নতুন আইনটি কার্যকর হয়েছে। ২০১৫ সালের আইন নম্বর ২১-এর কিছু ধারা সংশোধন করে ২০১৮ সালের আইন নম্বর ১৩ প্রণয়ন করা হয়।
গত সেপ্টেম্বরে আইনটি অনুমোদন করেন আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি। এতে অভিবাসী শ্রমিকদের কাতারে প্রবেশ, বসবাস ও কাতার ত্যাগ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিধিতে সংশোধনী আনা হয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী, অভিবাসী শ্রমিকদের কাতার ত্যাগের আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে আর বহির্গমন ছাড়পত্র নিতে হবে না। দীর্ঘ সচেতনতা অভিযানের পর ২৮ অক্টোবর থেকে নতুন আইনটি কার্যকর হয়েছে।
নতুন আইনে ২০১৫ সালের আইন নম্বর ২১-এর অনুচ্ছেদ ৭ ২০০৪ সালের শ্রম আইন নম্বর ১৪ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে চাকরির চুক্তিকালে অভিবাসী শ্রমিকদের বহির্গমন ছাড়পত্র ছাড়াই সাময়িক ও স্থায়ীভাবে কাতার ত্যাগের অধিকার স্বীকার করা হয়েছে। শ্রম আইন সংশোধন করে আনা এই আইন কার্যকরের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও কাতারে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা।
২৮ অক্টোবর কাতারের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা (কিউএনএ) জানায়, ২০১৫ সালের আইন নম্বর ২১-এর অনুচ্ছেদ ৭ সংশোধন করে প্রণীত নতুন শ্রম আইন (নম্বর ১৩,২০১৮) কার্যকর করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফলে আগের মতো আর অভিবাসী শ্রমিকদের কাতার ত্যাগের আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র নিতে হবে না।
বিমানবন্দর ও পাসপোর্ট বিভাগের পরিচালক কর্নেল রশিদ আল-মাজরুই আইনটি কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করে, বিভিন্ন বন্দর দিয়ে ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদ্ধতি অবলম্বনের কথা জানান। তিনি জানান, ২৮ অক্টোবর দিনের শুরুতেই বিভিন্ন বন্দরে পূর্ববর্তী আইন অনুযায়ী বহির্গমন ছাড়পত্রের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সংশোধিত আইন কার্যকরে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
নতুন আইন অনুযায়ী একজন চাকরিদাতার অধিকার রয়েছে সমাজ, প্রশাসনিক উন্নয়ন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে (এমএডিএলএসএ) নিজের প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের ৫ শতাংশের একটি তালিকা জমা দেওয়ার, যাদের কাজের ধরনের কারণেই বহির্গমন ছাড়পত্রের প্রয়োজন রয়েছে। তালিকাভুক্ত শ্রমিকেরা নতুন শ্রম আইনের সুবিধা ভোগ করবেন না। তবে বহির্গমন ছাড়পত্র প্রয়োজন হবে এমন শ্রমিকের সংখ্যা একটি প্রতিষ্ঠানের মোট শ্রমিকের ৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।
এমএডিএলএসএ এক টুইটার পোস্টের মাধ্যমে জানায়, ‘আজ (২৮ অক্টোবর) আইন নম্বর ১৩,২০১৮ কার্যকর হয়েছে। বেসরকারি খাতের অভিবাসী কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্রের রীতি বাতিল করা হয়েছে। সারা দেশের সব বন্দরে বহির্গমন আগের মতোই সহজ ও স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে।’
কর্নেল রশিদ আল-মাজরুই বলেন, হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচআইএ) পাসপোর্ট কাউন্টার ও ইলেকট্রনিক গেটগুলো দিয়ে যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাতারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অভিবাসী কর্মীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে নতুন আইন মোতাবেক সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, নতুন আইন অনুযায়ী অভিবাসী শ্রমিকেরা ভ্রমণ অনুমোদন (ট্রাভেল পারমিট) ছাড়াই কাতার ত্যাগ করতে পারবেন, যদি না এ বিষয়ে বিচারিক বি নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো আপত্তি না থাকে। তবে কাতারের বাইরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আসা সব অভিবাসী কর্মীকে বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে এ সম্পর্কিত বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়।
এ সম্পর্কিত এক টুইটার পোস্টে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘অভিবাসী কর্মীদের কেউ যদি কাতার ত্যাগ করতে না পারে, তবে তারা এ সম্পর্কিত বিশেষ কমিটিতে অভিযোগ আনতে পারে। এই কমিটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অভিযোগ আমলে নিয়ে তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিষয়টির নিষ্পত্তি করবে।’
নতুন আইন কার্যকরে উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে আইএলও। কাতারে আইএলও কার্যালয় নতুন আইন কার্যকরের খবরের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, ‘দারুণ খবর। কাতারের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিকদের জন্য আজ থেকে আর বহির্গমন ছাড়পত্রের প্রয়োজন হবে না।’
কাতারে আইএলও কার্যালয়ের প্রধান হুতান হোমায়ুনপুর বলেন, ‘২৮ অক্টোবর থেকে কাতারে কর্মরত সংখ্যাগরিষ্ঠ অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য আর বহির্গমন ছাড়পত্রের প্রয়োজন পড়বে না। কাতারে বসবাসরত অভিবাসী কর্মীদের ওপর এ আইন সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কাতারে শ্রম খাত সংস্কারে গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে আমরা সরকার, চাকরিদাতা, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একযোগে কাজ করব।’ সূত্র: দ্য পেনিনসুলা।