ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইসরায়েলের গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছে। এ সংঘাতের জেরে মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা ঘটছে।আঘাতের পাল্টা জবাবে কয়েক দিন ধরে ফিলিস্তিন থেকে শত শত রকেট ছোড়া হচ্ছে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে। তবে এসব রকেটের অধিকাংশই ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করছে ইসরায়েল। রকেট হামলা ঠেকানোর জন্য ইসরায়েলের হাতে আছে ‘আয়রন ডোম’ নামের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা আয়রন ডোমের মাধ্যমে ৯০ শতাংশ রকেট হামলা আকাশেই ঠেকিয়ে দিয়েছে। আয়রন ডোম কী, আর তা কীভাবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে, তা তুলে ধরেছে বিবিসি অনলাইন।
আয়রন ডোম বিশ্বের একটি অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা বিশেষভাবে স্বল্পপাল্লার (শর্ট রেঞ্জ) হুমকির বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।
ইসরায়েলের রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস ও ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ আয়রন ডোম তৈরি করেছে। আয়রন ডোম তৈরির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেও কিছু সহায়তা পেয়েছে ইসরায়েল।
আয়রন ডোম তৈরির প্রেক্ষাপট ২০০৬ সালে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ। ওই যুদ্ধের সময় হিজবুল্লাহ হাজারো রকেট হামলা চালায় ইসরায়েলে। হিজবুল্লাহর রকেট হামলায় ইসরায়েলের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
হিজবুল্লাহর সঙ্গে ওই যুদ্ধের পর ইসরায়েল ঘোষণা দেয়, তারা একটি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে যাচ্ছে। ২০১১ সালে ইসরায়েল প্রথম আয়রন ডোম মোতায়েন করে।
আয়রন ডোম ব্যবস্থার প্রধান দিক তিনটি। রাডার ব্যবস্থা, কন্ট্রোল ব্যবস্থা, মিসাইল ফায়ারিং ব্যবস্থা। এ তিন ব্যবস্থা মিলেই গড়ে ওঠে সুদৃঢ় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।
ইসরায়েলের দিকে ধেয়ে আসা রকেটকে চিহ্নিত ও তার গতিপথ শনাক্ত (ট্র্যাক) করে রাডার ব্যবস্থা। তারপর কন্ট্রোল ব্যবস্থা ধেয়ে আসা রকেটের সম্ভাব্য ‘হিট পয়েন্ট’ নির্ধারণ করে। ‘হিট পয়েন্ট’ নির্ধারণের পর কন্ট্রোল ব্যবস্থা মিসাইল ফায়ারিং ব্যবস্থাকে নির্দেশনা দেয়। মিসাইল ফায়ারিং ব্যবস্থা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যায় আকাশে। আকাশে গিয়ে ধেয়ে আসা রকেটের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরিত হয়। এতে রকেট আকাশেই ধ্বংস হয়ে যায়।
ফলে ইসরায়েল অভিমুখে ছোড়া রকেট কোনো ক্ষয়ক্ষতি সাধন করার আগেই তা আকাশে ধ্বংস হয়ে যায়।
আয়রন ডোম ব্যবস্থা দিন বা রাত সব সময় কাজ করতে সক্ষম। এ ছাড়া এ ব্যবস্থা যেকোনো আবহাওয়ায় কার্যকর।
সম্প্রতি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লে. কর্নেল জনাথন কনরিকাস স্বীকার করেন, তাদের হাতে যদি আয়রন ডোম ব্যবস্থা না থাকত, তাহলে ইসরায়েলিদের ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি হতো। আয়রন ডোম ব্যবস্থা তাদের জীবন রক্ষায় কাজ করছে।
তবে গাজা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আয়রন ডোমের দুর্বলতা বেরিয়ে আসছে। দেখা গেছে, আয়রন ডোমের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারছে রকেট। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার এ ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, আয়রন ডোমেরও সীমাবদ্ধতা আছে।