দখলকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার অভিযোগে সেখানকার অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারী চার ইসরায়েলির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টিতে অনুমোদন দিয়ে এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, পশ্চিম তীরে সহিংসতা ‘অসহনীয় পর্যায়ে’ পৌঁছেছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় ওই চার ইসরায়েলি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তাঁদের সম্পত্তি ও দেশটির আর্থিক ব্যবস্থা ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। তবে যে চার ইসরায়েলি নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা বিরল ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মিশিগান অঙ্গরাজ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সফরের সময় এ ঘোষণা এল। অঙ্গরাজ্যটিতে আরব–আমেরিকান জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বসবাস করে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সদস্যরা হামলা চালানোর পর থেকে পশ্চিম তীরে সহিংসতা আরও বেড়েছে। দ্য আরব আমেরিকান ইনস্টিটিউট নামের একটি পরামর্শক গ্রুপের প্রতিবেদনে বলা হয়, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রতি আরব–আমেরিকানদের সমর্থন ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০২০ সালে ছিল ৫৯।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি হামলার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশকে তারই ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। আদেশে বাইডেন বলেছেন, পশ্চিম তীরের পরিস্থিতি–বিশেষ করে উগ্রপন্থী বসতি স্থাপনকারীদের মাত্রাতিরিক্ত সহিংসতা, মানুষকে জোর করে বাস্তুচ্যুত করা এবং সহায়–সম্পত্তি ধ্বংস করা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।
নিষেধাজ্ঞার আদেশে বাইডেনের স্বাক্ষরের পরপরই এ বিষয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী বেশির ভাগ বাসিন্দা ‘আইন মেনে চলে’। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দপ্তর থেকে বলছে, ইসরায়েল সব জায়গাতেই আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। তাই এ বিষয়ে কারও অস্বাভাবিক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
এই প্রতিক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের টানাপোড়েন আরও প্রকাশ্য করে তুলেছে। বাইডেন ও নেতানিয়াহু দীর্ঘদিনের মিত্র। তবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন প্রশ্নে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তাঁদের মধ্যে দ্বিমত দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, ওই অঞ্চলে দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীলতা ও শান্তি ফেরাতে হলে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানই সর্বোত্তম উপায়। এর অর্থ, ইসরায়েলের পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে। কিন্তু বারবার এ ধারণা প্রত্যাখ্যান করে আসছেন নেতানিয়াহু। এ বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে মতানৈক্যের বিষয়টি গত মাসে স্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে রকেট হামলা চালায় হামাস। পাশাপাশি সংগঠনটির সদস্যরা সীমান্ত পেরিয়ে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে হামলা চালান। ইসরায়েল জানিয়েছে, ওই দিনের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় এরই মধ্যে কিছুসংখ্যক জিম্মি মুক্তি পেয়েছেন। ইসরায়েলের দাবি, এখনো ১৩২ জন হামাসের হাতে জিম্মি আছেন।
হামাসের হামলার জবাবে ৭ অক্টোবর থেকেই গাজা উপত্যকায় হামলা শুরু করে ইসরায়েলের বাহিনী। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, চলমান এ হামলায় এখন পর্যন্ত ২৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিন নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।