বাংলাদেশে সরকার পতন এবং এর পরের ঘটনাপ্রবাহ আজ মঙ্গলবারও ফলাও করে প্রচার করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যম জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ও অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকার গঠনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কেন এই গণ-অভ্যুত্থান এবং শেখ হাসিনার দেশত্যাগের কারণও ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে সংবাদমাধ্যমগুলো।
নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ভেবেছিলেন ক্ষমতার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তাঁর হাতে, যা কেউ চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশিরা তাঁকে ভুল প্রমাণ করেছেন।
সোমবারের মতো আজও বাংলাদেশ নিয়ে হালনাগাদ তথ্য ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। ‘শেখ হাসিনার আচমকা দেশত্যাগের পর বাংলাদেশের পার্লামেন্ট বিলুপ্ত’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে সরকার মেনে নেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। বিবিসির আরেকটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘শেখ হাসিনা: গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী থেকে স্বৈরশাসক’।
‘বাংলাদেশের পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে, সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের সরকার মেনে নেওয়া হবে না বলে ঘোষণা ছাত্রদের’ শিরোনামে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আজ দেখা করেছেন। ছাত্রনেতারা জানিয়েছেন, সামরিক নেতৃত্বের কোনো সরকার তাঁরা মানবেন না।
হিন্দুস্তান টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী আজ ভারতের লোকসভায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, খুব অল্প সময়ের নোটিশে ভারতে আসার আবেদন করেছিলেন শেখ হাসিনা। ভারত সেই অনুমতি দেওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যায় ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে তিনি ভারতে আসেন। সংবাদমাধ্যমটির আরেকটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘শেখ হাসিনার লন্ডন পরিকল্পনা নিয়ে অনিশ্চয়তা’
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বর্তমান পরিস্থিতি ভারত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে লোকসভায় জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি দেশটির পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। এখনো ভারতেই আছেন শেখ হাসিনা।
আজ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এএফপি। সংবাদ সংস্থাটির এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর পতনের পর মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া’। বাংলাদেশের সংকট নিয়ে ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাতে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘কে এই ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে চাচ্ছেন বাংলাদেশের বিক্ষোভকারীরা’?
গার্ডিয়ান-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের এক দিন পর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রাণঘাতী বিক্ষোভের মুখে দীর্ঘদিনের শাসক শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর এমন পদক্ষেপ নেওয়া হলো।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশে জেন-জির বিপ্লবে একজন বর্ষীয়ান নেত্রী উৎখাত হয়েছেন’। তাতে বলা হয়েছে, প্রধানত ছাত্র-তরুণের নেতৃত্বে দেশটির দীর্ঘদিনের শাসক শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বৈরশাসক হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশশূন্য ঢাকা, আতঙ্কে বাংলাদেশজুড়ে ফাঁকা বহু থানা। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর বাংলাদেশে আবারও বিশৃঙ্খল এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
দ্য ডন-এর আজকের এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘যেভাবে জেন-জিরা দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা একজন স্বৈরশাসককে পরাস্ত করল’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতা এখন তরুণ বাংলাদেশিদের হাতে। তাদের এখন অবশ্যই প্রধান করণীয় হবে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের হাতে যে ক্ষমতা এসেছে, তার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফেরানো, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বৈষম্য দূর করার মতো কাজে মনোযোগী হওয়া।