অস্ট্রেলিয়ার সিডনির আবহাওয়া এখন শীতল। রোদেলা দিনেও শীতবস্ত্র পরতে হয়। সূর্যের আলো মিলিয়ে যাওয়ার পর শীত শীত সন্ধ্যা-রাতে এখন সিডনি হয়ে ওঠে এক ‘মায়াপুরী’। সিডনির উঁচু-নিচু ইমারত ও নামী স্থাপনাগুলো হঠাৎ ভেসে যায় আলোর বন্যায়। ভেসে আসে মৃদু সুর। কোনো জাদুকরের ছুমন্তরে ‘এ কোথায় এলাম’—এমন প্রশ্ন জাগে সিডনিতে নতুন আসা মানুষের মনে। আলো ও সুরের ঝলকানিতে মাতাল করে তোলা এই উৎসবের নাম ‘ভিভিড সিডনি’।
‘ভিভিড সিডনি’ হলো ২৩ রাতব্যাপী আলোর সঙ্গে সুরের সম্মিলনের এক মনমাতানো উৎসব। উৎসবের অনুষঙ্গ হিসেবে থাকে আরও অনেক বিষয়। গত ২৬ মে এই উৎসব শুরু হয়, চলবে ১৭ জুন পর্যন্ত।
উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই সিডনির বিখ্যাত স্থাপনা অপেরা হাউস, হারবার ব্রিজ, বোটানিক গার্ডেনসহ আশপাশ সেজে ওঠে বর্ণিল আলোয়।
২৫টির বেশি দেশের দুই শতাধিক আলোকচিত্রশিল্পীর শিল্পকর্মে সিডনির এই উৎসবের প্রদর্শনীগুলো জীবন্তপ্রায় হয়ে ধরা দেয় দর্শকদের চোখে।
শিল্প, প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের মেলবন্ধন দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো দর্শক ভিড় করেন সিডনিতে। দিনের আলো মিলিয়ে গেলে ভিন্ন এক আলোয় মুখর হঠাৎ অচেনা করে তোলে চিরচেনা সিডনিকে।
আলোক উৎসবের অন্যতম অংশ সংগীত। উৎসবের শুরুর দিন থেকেই বিনা মূল্যে এই সুরের আয়োজন উপভোগ করা যায়। মূল শহরের যেকোনো প্রান্ত থেকেই এই সুর শোনা যায়।
ভিভিড সিডনিতে এবার প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে বাহারি খাবারের উৎসব। একে বলা হচ্ছে ‘ভিভিড ফুড’।
সিডনির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বহু সাংস্কৃতিক খাবার। বহু দেশের খাবার পরিচিত করতেই এবার এই উৎসবে খাবার যুক্ত করা হয়েছে।
আয়োজনে আছে আগুনের খেলাযুক্ত খাবার, ফিউশন খাবার, নামজাদা সব তারকা রন্ধনশিল্পীর সরাসরি তৈরি করা খাবার, ফুলের তৈরি খাবার, প্রমোদতরিতে খাবার, নিজে তৈরি করা খাবার। উৎসবে খাবার টেবিলেও থাকছে আলোর মেলা।
এবারের ভিভিড সিডনি উৎসব প্রথম সপ্তাহেই রেকর্ড পরিমাণ দর্শক আকর্ষণ করেছে। উৎসবের প্রথম সপ্তাহে সাড়ে চার লাখের বেশি দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।
২০২২ সালের ভিভিড সিডনি দেখতে ২৩ দিনে প্রায় ২১ লাখ দর্শক এসেছিলেন। সিডনির অর্থনীতিতে এই আলোক উৎসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে।
অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিরাও ভিভিড সিডনির এই উৎসব দেখে থাকেন।
নাটকের শুটিং করতে এখন সিডনিতে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ও অভিনেত্রী সাবিলা নূর। আছেন পরিচালক শিহাব শাহীন ও তাঁর দল।
বিশ্বের অন্যতম এই আলোক উৎসব দেখতে এসেছিলেন অপূর্ব। ভিভিড সিডনির অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সিডনি এমনিতেই অবাক করা সুন্দর শহর। এর মধ্যে ভিভিড সিডনির মতো একটা উৎসবের দেখা পেলাম, যা সত্যিই অতুলনীয়। এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখিনি।’