আল-জাজিরার বিশ্লেষণ

ব্রিকস কি ডলারের আধিপত্য কমাতে পারবে

ব্রিকসের সদস্যদেশের নেতারা। বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে
ছবি: রয়টার্স

আট দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্বে আধিপত্য করছে মার্কিন ডলার। কিন্তু এই আধিপত্য কমাতে বদ্ধপরিকর উন্নয়নশীল পাঁচ দেশের জোট ব্রিকস। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে বসেছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার এ জোটের শীর্ষ সম্মেলন। এতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ডলারের আধিপত্য কমানোর প্রক্রিয়া জোরেশোরে চলছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বে ডলার হলো প্রধান রিজার্ভ মুদ্রা। বলা হয়, বিশ্ববাণিজ্যের ৮০ শতাংশের বেশি ডলারে লেনদেন হয়। চলতি বছরের শুরুতে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা প্রশ্ন তোলেন, কেন সব দেশ ডলারে লেনদেন করবে। এর পরপর রাশিয়ার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ব্রিকস নিজস্ব মুদ্রা চালুর কথা ভাবছে।

ডলারের আধিপত্য কমানোর চেষ্টা নতুন নয়। তবে বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, বিশ্বরাজনীতির মেরুকরণ এখন ভিন্ন রূপ নিয়েছে। রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে পশ্চিমাদের উত্তেজনা বেড়েছে। এই পরিস্থিতি ব্রিকসকে ডলারের আধিপত্য নিয়ে ভাবাচ্ছে; বিশেষত চীন ও রাশিয়ার ওপর একের পর এক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পর।

যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের জ্যেষ্ঠ ভিজিটিং ফেলো শিরলে জে উ বলেন, রাশিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সময় ডলারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে উন্নয়নশীল অন্য দেশগুলো বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও রিজার্ভের জন্য ডলারের বিকল্প খুঁজছে। এমনকি লেনদেনে সুইফটের বিকল্প আন্তর্জাতিক মাধ্যম খোঁজা হচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ইউনিভার্সিটি অব প্রিটোরিয়ার অধ্যাপক ড্যানি ব্র্যাডলোর মতে, ডলারের বিকল্প মুদ্রা কী হবে, সেটা ঠিক করা কঠিন। কেননা ব্রিকসের একেক সদস্যদেশ একেক মুদ্রা ব্যবহার করে। আর ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করাও নিরাপদ নয়।

এ অবস্থায় ব্রিকসের দেশগুলোর স্বতন্ত্র মুদ্রা চালু করাটাও কঠিন বলে মনে করেন শিরলে জে উ। তিনি বলেন, ব্রিকসের মুদ্রা চালু করতে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান, মানদণ্ড প্রয়োজন হবে। এটা অর্জন করা কঠিন।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাক্রো-অ্যাডভাইজরির বিনিয়োগ বিশ্লেষক ক্রিস ওয়েফার বলেন, ব্রিকসের সদস্যদেশগুলোর সরকারও জানে, স্বতন্ত্র মুদ্রা চালু করা কার্যত অসম্ভব। দীর্ঘ সময় পরও এটা কার্যকর হবে না। তিনি বলেন, ব্রিকসের অভিন্ন মুদ্রা চালুর ধারণাই অবাস্তব। কেননা, আধিপত্যের শিকার হওয়ার ভয়ে চীনের সঙ্গে অন্য দেশগুলো তাদের আর্থিক নীতি মেলাতে চাইবে না।

তাই ডলারের বিকল্প হিসেবে ব্রিকসের দেশগুলো বড় পরিসরে নিজেদের মুদ্রায় লেনদেন শুরু করতে পারে, এমনটাই মত ক্রিস ওয়েফারের। তিনি বলেন, চীন-রাশিয়ার মধ্যে ৮০ শতাংশ বাণিজ্য রুবল (রাশিয়ার মুদ্রা) কিংবা ইউয়ানে (চীনের মুদ্রা) হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া অন্য দেশগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। ব্রিকস মুদ্রা চালুর চেয়ে এটা হবে সবচেয়ে কার্যকর কৌশল।

এমনকি ব্রিকসের বাইরে গত মাসে ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত রুপিতে লেনদেন শুরুর চুক্তি করেছে। এসব উদ্যোগ এগিয়ে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন ক্রিস ওয়েফার। তাঁর মতে, আর এভাবেই ডলারকে চাপে রাখা যাবে।