বিদায় নিয়েছে ঘটনাবহুল ২০২৩ সাল। যাত্রা শুরু করল ২০২৪। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহর থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়েছে নতুন বছরকে। আতশবাজির আলোয় রঙিন হয়েছে বড় শহরগুলোর আকাশ।
নানা কারণে ২০২৩ মানুষের মনে দাগ কেটে রাখবে। জলবায়ু সংকটের কারণে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় এ বছর মানুষের দুর্গতির কারণ হয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলা ও ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিশ্বজুড়ে নানা সংঘাত রক্ত ঝরিয়েছে। আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো যুগান্তকারী প্রযুক্তির বিকাশও হয়েছে এ বছরেই। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এসেছে বড় অগ্রগতি।
তবে সবার নজর এখন নতুন বছরের দিকে। বিভিন্ন দিক দিয়ে এ বছরটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দেখে নেওয়া যাক ২০২৪ সালের যেসব ঘটনা বছরজুড়ে আলোচনার শীর্ষে থাকতে পারে।
২০২৪ সালে বিভিন্ন দেশে নির্বাচনে ভোট দেবে বিশ্বের ৪২০ কোটির বেশি মানুষ। সংখ্যাটি বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি। বাংলাদেশসহ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৭০টির বেশি দেশে।
এ বছরের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রে। বছরজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচনের দিকে নজর থাকবে বিশ্ববাসীর। হিসাব-নিকাশ বলছে, নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে লড়তে যাচ্ছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রতিপক্ষ হতে পারেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ মাসে সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর জরিপ অনুযায়ী, জনসমর্থনের দিক দিয়ে বাইডেনের চেয়ে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প।
আগামী মার্চে রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বিশ্লেষকের অনেকের ধারণা, এবারও বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখবেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একই ধারণা বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশ ভারতকে নিয়েও। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে আগামী এপ্রিল ও মে মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থান নিয়ে দেশটির মানুষের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও নির্বাচনে সহজেই জয় পাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ক্ষমতাসীন বিজেপি।
নির্বাচনের কারণে ২০২৪ সালে পর্যবেক্ষকদের নজর থাকবে যুক্তরাজ্য, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভেনেজুয়েলাসহ বিভিন্ন দেশের দিকেও।
গত সেপ্টেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছিলেন, গত দুই দশকের মধ্যে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবে এর কিছুদিন পরই পরিস্থিতি বদলে যায়। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সেদিন থেকে এখনো গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ২১ হাজার ৬০০ জনের বেশি মানুষ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে উপত্যকাটি। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে দফায় দফায় চলছে আলোচনা। বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এ আলোচনা সফলতার মুখ দেখতে পারে।
যদিও নেতানিয়াহু সরকার বলছে, যুদ্ধ শেষে অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে ইসরায়েলি বাহিনী। এমন পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে যে গাজা শাসনের দায়িত্ব আরব কোনো দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা—এমনকি ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের হাতেও তুলে দিতে পারেন নেতানিয়াহু।
২০২৪ সালে তৃতীয় বছরে গড়াবে ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ সামনে রেখে প্রতিরক্ষা খাতে এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ ঘোষণা করেছে রুশ সরকার। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস বলছে, শিগগিরই হয়তো এ যুদ্ধ বন্ধের ইচ্ছা নেই ক্রেমলিনের।
গত নভেম্বরে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনি স্বীকার করে নিয়েছিলেন, যুদ্ধে ইউক্রেনের অগ্রগতি এই মুহূর্তে থমকে আছে। আর আসন্ন দিনগুলোতে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বড় কোনো চমক না আসার সম্ভাবনাই বেশি।
বিশ্লেষকের অনেকে বলছেন, এরই মধ্যে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সহায়তায় বাধা আসছে। আর এ বছরে নির্বাচনে জয় পেলে দেশটিতে হামলা আরও বাড়াতে পারেন পুতিন। চলতি বছরে ইউক্রেনেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সব মিলিয়ে ক্রেমলিনের সঙ্গে যুদ্ধ নিয়ে একটি চুক্তিতে যেতে কিয়েভের ওপর চাপ বাড়ছে।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৪ সালের প্রথম আকাশে উড়তে যাচ্ছে ‘গাড়ি’। বিবিসির ব্যবসা প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক বেন মরিসের ভাষ্যমতে, এগুলো হচ্ছে একধরনের আকাশযান, যেগুলো কম শব্দ উৎপন্ন করবে, কার্বন নির্গমন করবে না এবং দামও কম হবে। সেগুলো সহজেই শহর থেকে আকাশে উড়তে পারবে এবং অবতরণ করতে পারবে।
সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই আকাশযানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শহরে ২০২৪ সালে বাণিজ্যিকভাবে ছাড়া হতে পারে। এ ছাড়া এ বছর প্যারিস অলিম্পিকসের সময় শহরটিতে বিশ্বের প্রথম এ ধরনের ইলেকট্রিক আকাশযানের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। তবে শহর কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে সে পরিকল্পনা বাতিল করা হয়।