নিখোঁজ হওয়া পর্যটক সাবমেরিনটির খোঁজে আটলান্টিক মহাসাগরে প্রায় ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে অভিযান চলছে। তবে সময় যত গড়াচ্ছে, নিখোঁজ সাবমেরিনটিতে মজুত থাকা অক্সিজেন ততই ফুরিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড বলছে, টাইটান নামের সাবমেরিনটিতে এখন যে পরিমাণ অক্সিজেন আছে, তা দিয়ে পর্যটকেরা ৩০ ঘণ্টারও কম সময় টিকে থাকতে পারবেন।
গত রোববার আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে পর্যটকেদের নিয়ে রওনা দিয়ে নিখোঁজ হয় ‘টাইটান’ নামের সাবমেরিনটি। যাত্রার ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মাথায় ছোট সাবমেরিনটির সঙ্গে ভূপৃষ্ঠের নিয়ন্ত্রণকক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। সাবমেরিনটিতে যে পরিমাণ অক্সিজেন মজুত থাকে, তা দিয়ে ৯৬ ঘণ্টা পানির নিচে টিকে থাকা যায়। তবে ইতিমধ্যে তার অনেকখানিই ফুরিয়ে এসেছে।
সাবমেরিনটি উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ডের কমান্ডারদের নেতৃত্বে তৃতীয় দিনের মতো অভিযান অব্যাহত আছে। কানাডার নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও কোস্টগার্ড এবং নিউইয়র্কের এয়ার ন্যাশনাল গার্ডের উদ্ধারকারী দল এ অভিযানে সহযোগিতা করছে। ফ্রান্সের একটি জরিপকারী জাহাজও এ উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দিয়েছে।
নিউফাউন্ডল্যান্ডের রাজধানী সেন্ট জনস থেকে প্রায় ৯০০ মাইল (১ হাজার ৪৫০ কিলোমিটার) পূর্বে এবং ৪০০ মাইল (৬৪৩ কিলোমিটার) দক্ষিণে সাগর এলাকায় সাবমেরিনটি নিখোঁজ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাবমেরিনটিতে থাকা পাঁচ যাত্রীর পরিচয় জানতে পেরেছে বিবিসি। তাঁরা হলেন হ্যামিশ হার্ডিং, শাহজাদা দাউদ, সুলেমান দাউদ, পল হেনরি নিরজিওলেট ও স্টকটন রাশ।
৫৮ বছর বয়সী হ্যামিশ হার্ডিং একজন ব্রিটিশ অভিযাত্রী। তিনি মহাকাশে গেছেন এবং বেশ কয়েকবার দক্ষিণ মেরুতেও ভ্রমণ করেছেন।
৪৮ বছর বয়সী শাহজাদা দাউদ পাকিস্তানের একটি ধনী পরিবারের সদস্য। ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রতিষ্ঠিত দুটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সেবা কাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত। তাঁর ছেলে সুলেমান দাউদও ওই সাবমেরিনে ছিলেন। ১৯ বছর বয়সী সুলেমান একজন শিক্ষার্থী।
৭৭ বছর বয়সী পল হেনরি নারজোলেত ফরাসি নৌবাহিনীর সাবেক ডুবুরি। ১৯৮৭ সালে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের এলাকায় যাওয়া প্রথম অভিযানকারী দলের সঙ্গে তিনি ছিলেন।
৬১ বছর বয়সী স্টকটন রাশ ওশেনগেট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী। কোম্পানিটি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখানোর জন্য সাবমেরিন সরবরাহ করে থাকে।
১৯১২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে প্রথম যাত্রা শুরু করে টাইটানিক। সেবারই এক হিমশৈলীর সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় সে সময়ের সবচেয়ে বড় এ জাহাজ। এতে জাহাজটিতে থাকা ২ হাজার ২০০ যাত্রীর ১ হাজার ৫০০ জনের বেশি মারা যান। ১৯৮৫ সালে আটলান্টিকের তলদেশে ১২ হাজার ৫০০ ফুট গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া যায়।