ভারতের মণিপুরে দুই কুকি নারীর ওপর ভয়াবহ যৌন নিগ্রহের ভিডিও চিত্র বুধবার রাতে প্রকাশ্যে এসেছে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গোটা দেশে আলোড়ন শুরু হয়েছে। রাজ্যটিতে সহিংসতা শুরু হওয়ার ৭৭ দিন পর এ ঘটনা ঘিরে প্রথম মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কেন্দ্রীয় সরকারকে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘আমার হৃদয় বেদনা ও ক্ষোভে পূর্ণ। মণিপুরের যে ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, তা যেকোনো সুশীল সমাজের জন্য লজ্জাজনক।’ প্রধানমন্ত্রী মোদি সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের আগে তাঁর প্রথাগত ভাষণে এ কথা জানিয়ে বলেছেন, মণিপুরের মেয়েদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, তা কখনোই ক্ষমা করা যাবে না।
ইতিমধ্যে পুলিশ এ ঘটনার প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির সাহায্যে থৌবাল জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে হেরাদাস (৩২) নামের ওই অভিযুক্তকে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় এক হাজার স্থানীয় বাসিন্দার একটি দল এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
ভিডিওটি ভারতজুড়ে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং বলেছেন, সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে ‘মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি’ বিবেচনা করছে।
৩ মে সহিংসতা শুরু হওয়ার পরের দিন, অর্থাৎ ৪ মের একটি ভিডিও বুধবার রাতে প্রকাশ্যে আসে। এতে দেখা যাচ্ছে, যুবকদের একটি দল গ্রামের রাস্তা দিয়ে দুই নারীকে হাঁটিয়ে ধানখেতে নিয়ে যাচ্ছে। দুই নারী সম্পূর্ণ নগ্ন এবং হাঁটতে হাঁটতেই যুবকদের কয়েকজন দুই নারীকে যৌন নিগ্রহ করছেন। দুই নারী কাঁদছেন এবং তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। সংক্ষিপ্ত এই ভিডিওতে দেখা গেছে, নারীদের ধানখেতের ভেতর দিয়ে কোনো অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন কুকি সংগঠনের তরফে প্রাথমিক তদন্তের পর যে ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট’ প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, এই দুই নারী ভাইফেই গোষ্ঠীর কুকি সম্প্রদায়ের সদস্য। তাঁদের একজনের বয়স ২০ ও আরেকজনের ৪০ বছর।
কুকি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, মেইতেই সম্প্রদায়ের নির্দিষ্ট সংগঠন নারীদের ওপর এ অত্যাচার চালিয়েছে।
ভিডিও সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মন্তব্য করেছেন। ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি এবং ভারতের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে আদালতে ডেকে পাঠান। ভেঙ্কটরামানি ও মেহতা আদালতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন।
দুই আইনজীবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দুই নারী সম্পর্কে বুধবার যে ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমাদের গভীর উদ্বেগ আমরা এখানে প্রকাশ করছি। এখন সরকারের নির্দিষ্টভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিষয়টি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।’