আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মণিপুর সংকটের ‘গ্রহণযোগ্য’ সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। মণিপুর সফররত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার এ প্রতিশ্রুতি দেন।
মঙ্গলবার রাজ্যের দক্ষিণের জেলা চূড়াচাঁদপুরে উপজাতি গোষ্ঠী আইটিএলএফের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
আইটিএলএফের মুখপাত্র গিঞ্জা ভুয়ালজং বলেছেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের ১৫ দিন শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ করেছেন। এর মধ্যে একটি শান্তি রক্ষা কমিটি গঠন করা হবে, যাতে করে রাজ্যে চলমান সংকটের একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান বের করা যায়।’
মণিপুরে উপজাতি নয়, এমন সম্প্রদায় মেইতেইদের সঙ্গে কুকিসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর লড়াইয়ে প্রায় এক মাসে অন্তত ১০৮ জনের মৃত্যুর পর সোমবার তিন দিনের সফরে রাজ্যে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অমিত শাহ মঙ্গলবার প্রথমে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে মেইতেই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর তিনি হেলিকপ্টারে করে ইম্ফল থেকে চূড়াচাঁদপুরে যান। এ সময় অমিত শাহর সঙ্গে ছিলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব এবং অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান।
চূড়াচাঁদপুরে বৈঠকে উপজাতি নেতা ছাড়াও কুকি বিধায়কেরা ছিলেন, যাঁদের প্রায় সবাই বিজেপি নেতা। এই বৈঠকে ছিলেন আধা সামরিক বাহিনী আসাম রাইফেলসে কর্মরত উপজাতি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাও। এ ছাড়া ছিলেন বিভিন্ন গির্জার প্রতিনিধি ও কুকি সমাজের বুদ্ধিজীবীদের একাংশ।
বৈঠকে উপজাতিদের পক্ষ থেকে ১১টি দাবি তোলা হয়েছে। এর মধ্যে উপজাতিদের জন্য ‘পৃথক প্রশাসন’ গঠন করার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হলে দিল্লি থেকে মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরাসরি সামলাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
উত্তর-পূর্ব ভারতে সমাজের ওপর নারী সমাজকর্মী ও সংগঠনগুলোর বেশ ভালো প্রভাব থাকায় মঙ্গলবার সকালের দিকে রাজ্যে নারী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন অমিত শাহ।
বিবদমান পক্ষের সঙ্গে বৈঠকের আগে অমিত শাহ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন।
এ বৈঠকের আগে রাজ্য সরকার জানায়, সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি করে দেওয়া হবে। এই অর্থ যৌথভাবে দেবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যাতে সংকট না হয় ও দাম যাতে না বাড়ে, সেদিকেও নজর রাখবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার।
বৈঠক শুরুর আগে মণিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের একটি সংগঠন ‘কো-অর্ডিনেটিং কমিটি অন মণিপুর ইন্টেগ্রিটি’ (কোকোমি) এক বিবৃতি দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিল, ‘মাদক সন্ত্রাসীদের আগ্রাসন বন্ধ করতে না পারলে মণিপুরে শান্তি ফেরানো যাবে না।’
মণিপুরে মাদক তৈরি ও চোরাচালান বেড়েছে দাবি করে রাজ্য সরকার বলছে, মিয়ানমার থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের কারণে মাদক ব্যবসা বেড়েছে রাজ্যে। নেপথ্যে কুকি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ সরকারের একাংশের। এই বক্তব্যের সঙ্গে কুকি সমাজ এবং বিভিন্ন কুকি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সমন্বয়ক সংগঠন কেএনও (কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন) একমত নয়।
তবে কেএনও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর মণিপুর সফরকে স্বাগত জানিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর কুকি জনগোষ্ঠীকে আশ্বস্ত করবে বলেও মনে করছে কুকিদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনটি। কেএনও দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ভারত সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার মধ্যে রয়েছে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার জন্য মণিপুর হাইকোর্ট সুপারিশ করার পর ৩ মে থেকে সহিংসতা চলছে। এতে নষ্ট হয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। ঘরবাড়ি ছেড়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও।
সোমবার কুকি জনগোষ্ঠীর অন্তত ৫০০ নারী দিল্লিতে বিক্ষোভ করেন। কুকিসহ অন্যান্য উপজাতি গোষ্ঠীর নারীদের দাবি, মণিপুরে তাঁদের সম্প্রদায়ের লোকজন ‘জাতিগত নিধনের’ মুখে রয়েছেন।