ভারতের লোকসভা নির্বাচনে এক্সিট পোল বা বুথফেরত জরিপ অনুযায়ী, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ ৩৫০ আসনের বেশি পেয়ে তৃতীয়বার কেন্দ্রে সরকার গড়তে যাচ্ছে। তবে বিরোধীরা বুথফেরত জরিপের ফলাফল মানতে নারাজ।
এ অবস্থায় আজ মঙ্গলবার সবার দৃষ্টি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দিকে। নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন কি না, তা আজই জানা যাবে। আজ সকাল আটটা থেকে রাজ্যে রাজ্যে শুরু হচ্ছে ভোট গণনা। সে জন্য প্রতিটি গণনাকেন্দ্রে গড়ে তোলা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা।
লোকসভা ভোটের পাশাপাশি ভোট হয়েছে ওডিশা ও অন্ধ্র প্রদেশ বিধানসভারও। সেই গণনাও হবে একসঙ্গে। অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিম বিধানসভার গণনা অবশ্য গত রোববার হয়ে গেছে। অরুণাচল প্রদেশ দখলে রেখেছে বিজেপি, সিকিমে আবার ক্ষমতায় সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চা।
ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, গণনা ত্রুটি ও সংশয়মুক্ত করতে রোববার বিরোধী দলের নেতারা যেসব দাবি জানিয়েছিলেন, প্রতিটিই মেনে নেওয়া হয়েছে। গণনায় কারচুপি নিয়ে কারও মনে কোনো রকম সন্দেহ বা সংশয় থাকা উচিত নয়। লাখ লাখ মানুষের চোখের সামনে সিসিটিভির নজরদারিতে প্রকাশ্যে গণনা চলবে। শুরুতেই হবে পোস্টাল ব্যালট গণনার কাজ। তারপর ইভিএমবন্দী ভোট গোনা হবে।
মুখ্য নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন ঘিরে শুরু থেকেই নানা অপপ্রচার চালানো হয়েছে। কখনো ভুয়া ভোটার তালিকা নিয়ে, কখনো বা অপপ্রচার চালানো হয়েছে ইভিএমের কারচুপি নিয়ে। ভোটারসংখ্যা বাড়ানো নিয়েও অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এখন অপপ্রচার করা হচ্ছে গণনায় গড়বড় করা নিয়ে।
নির্বাচন ঘিরে ভ্রান্ত ও অপপ্রচার প্রসঙ্গে চলে আসে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের তোলা অভিযোগ। গত শনিবার তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে ভোটের ফোফল নিজেদের অনুকূলে আনতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ১৫০ আসনের জেলা প্রশাসকদের ফোন করেছেন। গণনা শাসক দলের অনুকূলে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জেলা প্রশাসকেরাই ভোটের রিটার্নিং কর্মকর্তার।
রাজীব কুমার এই অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ জমা দিতে জয়রামকে নির্দেশ দেন। তিনি তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করে নোটিশের উত্তর দিতে সাত দিন সময় চান। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে রাজীব কুমার বলেন, আজকের (সোমবার সন্ধ্যা) মধ্যেই জবাব দিতে হবে। নইলে কমিশন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।
গণনা শুরুর আগপর্যন্ত বুথফেরত জরিপ ঘিরে বিতর্ক ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছেই। সব জরিপ সংস্থাই তর্কাতীতভাবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর সরকার গড়ার রায় দিয়েছে। শুধু তা–ই নয়, একাধিক সংস্থা এনডিএর প্রাপ্য আসন ৪০০ পর্যন্ত দিয়েছে। কোনো সংস্থাই ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে মত দেয়নি।
১০ বছর বিজেপির রাজত্বের পর এই জরিপের ফলাফল বিরোধীরা মেনে নিচ্ছে না। তাদের মতে, সরকারের চাপে এই সমীক্ষা দিতে সংস্থাগুলো বাধ্য হয়েছে। প্রকৃত ফলাফল হবে অন্য রকম।
এই বিতর্কের মধ্যেই গতকাল কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী বলেন, একটু অপেক্ষা করতে হবে। বুথফেরত জরিপ যা বলেছে, তার সম্পূর্ণ বিপরীত ফলাফল দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া জোট কত আসন পাবে, সোনিয়া অবশ্য তা বলেননি। তবে রোববার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পর জানিয়েছিলেন যে তাঁরা কমপক্ষে ২৯৫ আসন পেতে চলেছেন। আজ চক্ষু–কর্ণের বিবাদভঞ্জনের দিন।
বিজেপি অবশ্য হ্যাটট্রিকের আশায় চনমনে। আজ গণনার দিন বেলা তিনটার মধ্যেই দীন দয়াল উপাধ্যায় মার্গে দলের সদর দপ্তরে কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিত হতে বলে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি নেতাদের ধারণা, ওই সময়ের মধ্যেই বিপুল জয়ের ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে যাবে। এখন থেকেই দলীয় নেতারা আগাম জয়ের উদ্যাপন কোথায়–কীভাবে হবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন।
শোনা যাচ্ছে, নরেন্দ্র মোদি এবার প্রথামাফিক রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাইছেন না। তিনি চান, কর্তব্য পথ অথবা প্রগতি ময়দানের ‘ভারত মণ্ডপম’ বা ওই জাতীয় কোনো জায়গায় শপথ নিতে, যেখানে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ উপস্থিত থাকতে পারেন।
তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলে নরেন্দ্র মোদি ছুঁয়ে ফেলবেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে। ৪১৪ আসনের বেশি পেলে টপকে যাবেন রাজীব গান্ধীর রেকর্ড। ১৯৮৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যার পর লোকসভা ভোটে রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস ৪১৪ আসন জিতেছিল।