দক্ষিণ আফ্রিকায় সির মতো অভ্যর্থনা না পেয়ে বিমান থেকে নামতে চাননি মোদি

ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে স্বাগত জানানো হয়। ২২ আগস্ট
ছবি: এএনআই

দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে ‘অসম্মানিত বোধ করায়’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উড়োজাহাজ থেকে নামতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এমন খবর প্রচারিত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার এক গণমাধ্যমে। ওই খবর কোনো ভারতবাসী যাতে পড়তে না পারেন, সে জন্য ওই গণমাধ্যম ভারত থেকে সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার অবশ্য সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমে প্রচারিত ওই খবর নাকচ করে দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। যদিও সরকারি সূত্রের মতে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের অভিযোগ অসত্য।

দক্ষিণ আফ্রিকার ওই গণমাধ্যমের নাম ‘দ্য ম্যাভেরিক’। তাতে লেখা হয়, ২২ আগস্ট ‘অসম্মানিত’ প্রধানমন্ত্রী মোদি জোহানেসবার্গের কাছে প্রিটোরিয়ায় ওয়াটারক্লুফ বিমানঘাঁটিতে উড়োজাহাজ থেকে নামতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। কারণ, অবতরণের আগে নাকি জানা গিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী মোদিকে স্বাগত জানাতে বিমানঘাঁটিতে পাঠানো হয়েছে সে দেশের এক মন্ত্রীকে।

দ্য ম্যাভেরিক লিখেছে, মোদি অসম্মানিত বোধ করেছিলেন। কারণ, আগের দিন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা নিজে।

ওই ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোদির অসন্তোষ দূর করতে তড়িঘড়ি করে বিমানবন্দরে পাঠানো হয় সে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট পল মাশাটাইলকে।
দ্য ম্যাভেরিকে প্রকাশিত ওই খবর এবং সাইবার আক্রমণের অভিযোগ তুলে ধরে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘দ্য ওয়ার’ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে লেখা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার ওই গণমাধ্যমের শিরোনাম ছিল, ‘কঠিন প্রেমের ত্রিভুজ: সিকে রামাফোসার খাতির যত্ন, ক্ষুব্ধ মোদি বিমান থেকে নামতে নারাজ’।

কেন চীনা প্রেসিডেন্টকে রামাফোসা স্বাগত জানিয়েছিলেন—তার ব্যখ্যায় বলা হয়েছে, ব্রিকসের বৈঠক শুরুর আগে সি দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় সফরে। আগের দিন সোমবার। প্রধানমন্ত্রী মোদির ক্ষেত্রেও তেমনটাই চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে মোদির পক্ষে এক দিন আগে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

দ্য ওয়াইর–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত থেকে সাইবার আক্রমণের অভিযোগ এনেছেন দ্য ম্যাভেরিকের প্রধান নির্বাহী স্টাইলি চারালামবস। ভারতীয় গণমাধ্যম ‘স্ক্রোল.ইন’কে তিনি বলেছেন, ওই প্রতিবেদন যাতে দেখা না যায়, সে জন্য ভারত থেকে সাইবার আক্রমণ চালানো হয়। সেই হানাকে বলা হচ্ছে ‘ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অব সার্ভিস’ বা ‘ডিডিওএস’। এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটের সার্ভারকে ব্যাপক ইন্টারনেট ট্রাফিক দিয়ে প্লাবিত করে দেওয়া হয়, যাতে ব্যবহারকারীরা তাতে ঢুকতে না পারেন।
দ্য ম্যাভেরিকের ওই প্রতিবেদন দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার পুরোপুরি অস্বীকার করেছে।

সে দেশের অন্য এক গণমাধ্যম ‘দ্য নিউজ২৪’ সরকারের ওই অস্বীকৃতির কথা প্রচার করেছে। সে দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিভাগের (ডিআইআরসিও) মুখপাত্র লুঙ্গা এনকেনগেলেলের মতে, ব্রিকসের সদস্যদের কারা স্বাগত জানাবেন, তা আগে থেকেই ঠিক করা হয়। রাষ্ট্রপ্রধানদের ওয়ার্কিং ভিজিটের সময় সাধারণত স্বাগত জানান ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা। যেমন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভাকে স্বাগত জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেডি প্যানডর। তাঁর মতে, ভারতের দিক থেকে কোনো অসন্তোষও প্রকাশ করা হয়নি।

দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাশাটাইলের মুখপাত্র ভুকানি এমডেও দ্য ম্যাভেরিকের প্রতিবেদনকে নাকচ করে করে দিয়েছেন। দ্য নিউজ২৪ সেই অস্বীকৃতির খবর জানিয়ে বলেছে, তাঁরা আগেই জানতেন, প্রধানমন্ত্রী মোদিকে স্বাগত জানাতে হবে। মোদির উড়োজাহাজ অবতরণের আগেই তিনি বিমানবন্দরে উপস্থিত হন। ভাইস প্রেসিডেন্টকে চটজলদি তলব করে ওয়াটারক্লুফ বিমানঘাঁটিতে পাঠানো হয়নি।

দ্য নিউজ২৪ অবশ্য লিখেছে, ভারতীয়দের উত্তেজনা নিরসনে বুধবার ব্রিকস নেতাদের ছবি তোলার পর্বে প্রেসিডেন্ট রামাফোসা সবার আগে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন।