মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের বিধানসভা ভোটে জেতা বিজেপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলেন। আজ বুধবার লোকসভা ও রাজ্যসভার ১০ সদস্য পদত্যাগ করেন। আরও দুই সদস্যও ইস্তফা দিয়ে বিধায়কের দায়িত্ব পালন করবেন। পদত্যাগী সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং টোমার ও প্রহ্লাদ প্যাটেল।
নিয়ম অনুযায়ী, বিধানসভায় জেতার ১৪ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের যেকোনো একটি আইনসভা বেছে নেওয়ার কথা। সদ্য সমাপ্ত তিন রাজ্যের ভোটে বিজেপি মোট ২১ সংসদ সদস্যকে লড়াইয়ে নামিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ১২ জন জিতেছেন। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, প্রত্যেককেই সংসদ পদ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের সঙ্গেই নতুন করে লোকসভার নির্বাচন এগিয়ে আনার জল্পনা শুরু হয়েছে। বিজেপির ঘনিষ্ঠ মহলের ধারণা, এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে সরকার লোকসভার ভোট মার্চ মাসেই সেরে ফেলতে চাইছে। সে জন্য ফেব্রুয়ারিতে ভোট অন অ্যাকাউন্ট পাস করাতে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য প্রথামাফিক সংসদীয় অধিবেশন ডাকা হবে।
পদত্যাগী সংসদ সদস্যদের শূন্যস্থানে নতুন নির্বাচনের প্রয়োজন নেই। যেহেতু লোকসভার ভোটের বাকি বড়জোর ছয় মাস। আগামী বছর মে মাসের মধ্যে পরবর্তী লোকসভা গঠিত হওয়ার কথা।
যেসব সংসদ সদস্য আজ বুধবার পদত্যাগ করলেন, তাঁদের মধ্যে মধ্যপ্রদেশের পাঁচজন। তাঁরা হলেন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং টোমার, খাদ্য প্রক্রিয়ামন্ত্রী প্রহ্লাদ প্যাটেল, রাকেশ সিং, উদয় প্রতাপ সিং ও রীতি পাঠক।
রাজস্থান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা হলেন রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর, দিয়া কুমারী ও কিরোরি লাল মীনা (রাজ্যসভা)। ছত্তিশগড়ের সাংসদ অরুণ সাউ ও গোমতী সাইও পদত্যাগ করেছেন। রাজস্থানের গেরুয়াধারী সংসদ সদস্য বাবা বালকনাথ ও ছত্তিশগড়ের রেনুকা সিংও ইস্তফা দেবেন। রেনুকা কেন্দ্রীয় উপজাতি উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী। ২১ সংসদ সদস্যের মধ্যে এই ১২ জনই বিধানসভায় জিতেছেন।
বিজেপি এই মুহূর্তে ব্যস্ত তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের কাজে। রাজস্থানের প্রধান দাবিদার বসুন্ধরা রাজে। মধ্যপ্রদেশে এবারও মুখ্যমন্ত্রিত্বের জোরালো দাবিদার শিবরাজ সিং চৌহান। ছত্তিশগড়ে রমন সিং। তিনজনই বাজপেয়ি-আদভানি অনুগত নেতা বলে পরিচিত। তিনজনই নিজ নিজ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রিত্ব সামলে এসেছেন।
মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি এবার রাজ্য স্তরে অনুগত নতুন মুখ তুলে আনতে চাইছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা মুখ্যমন্ত্রী বাছাই করতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন।
লোকসভার ভোটের আগে তিন রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত তিন নেতার বদলে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঝুঁকিপূর্ণ হবে কি না, সেই বিচারও বিজেপিতে চলছে। এটাও ঠিক, পদত্যাগী সংসদ সদস্যদের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রিত্ব প্রত্যাশী মুখ রয়েছে। যেমন মধ্যপ্রদেশে প্রহ্লাদ যোশি, রাজস্থানে রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর ও ছত্তিশগড়ে রেনুকা সিং।
বিজেপির একটা বড় অংশ লোকসভার ভোট এগিয়ে আনার পক্ষে। ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন। এই মহলের মতে, তার রেশ থাকতে থাকতে ভোট সেরে ফেলা দরকার। তা ছাড়া দ্রুত ভোটের বাজনা বেজে গেলে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট সংঘবদ্ধ হওয়ার বিশেষ সময় পাবে না বলে তাঁরা মনে করছেন।