মাধপুর গ্রামের বাসিন্দাদের স্থায়ী আমানতের অর্থমূল্য প্রায় ৭ হাজার কোটি রুপি
মাধপুর গ্রামের বাসিন্দাদের স্থায়ী আমানতের অর্থমূল্য প্রায় ৭ হাজার কোটি রুপি

যেভাবে এশিয়ার সবচেয়ে ধনী গ্রাম গুজরাটের মাধপুর

ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসাকেন্দ্রগুলোর একটি গুজরাট। দেশটির প্রথম সারির অনেক শিল্পপতি এ রাজ্যের। রাজ্যটির শুধু শহর নয়, গ্রামেও লেগেছে সমৃদ্ধির ছোঁয়া। এমনই একটি গ্রাম মাধপুর।

মাধপুর শুধু ভারতের নয়, এশিয়ারও সবচেয়ে ধনী গ্রাম। রাজ্যের কচ্ছ জেলার ভুজ শহরের উপকণ্ঠে মাধপুর গ্রামটি অবস্থিত। এ গ্রামের অর্থনৈতিক চাকচিক্য সহজেই যে কারও চোখে পড়ে। গ্রামবাসীর স্থায়ী আমানতের অর্থমূল্য প্রায় ৭ হাজার কোটি রুপি।
মাধপুর গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই প্যাটেল জনগোষ্ঠীর। গ্রামের বর্তমান বাসিন্দা প্রায় ৩২ হাজার। কিন্তু ২০১১ সালে ছিল মাত্র ১৭ হাজার।

মাধপুরের অনেক বাসিন্দা বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করলেও গ্রামের সঙ্গে তাঁদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। তাঁরা যে দেশগুলোতে থাকেন ও কাজ করেন, সেখানকার ব্যাংকে না রেখে এ গ্রামের ব্যাংকেই অর্থ রাখতে পছন্দ করেন।
পারুলবেন কারা, কচ্ছ জেলা পঞ্চায়েতের সাবেক সভাপতি

গ্রামটিতে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ব্যাংক ১৭টি। এইচডিএফসি ব্যাংক, এসবিআই, পিএনবি, অ্যাক্সিস ব্যাংক, আইসিআইসিআই ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকসহ ভারতের বিখ্যাত সব ব্যাংকের শাখাই আছে এ গ্রামে। ভারতের আর কোনো গ্রামে এমনটি নেই। একটি গ্রামে এত ব্যাংক থাকার পরও দেশটির অন্য ব্যাংকগুলোও সেখানে শাখা খুলতে আগ্রহী।

গ্রামের এত অর্থবিত্তের উৎস কী

সংক্ষিপ্ত উত্তর—প্রবাসীদের পাঠানো আয়; যাঁরা অনাবাসী ভারতীয় (এনআরবি) নামে পরিচিত। এসব ব্যক্তি মাধপুর গ্রামের ব্যাংক ও ডাকঘরে প্রতিবছর কোটি কোটি রুপি জমা রাখেন।

গ্রামে ঘরের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। কিন্তু প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবার বিদেশে থাকে। তাদের অধিকাংশই বাস করে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে।

গ্রামের এত অর্থবিত্তের উৎস কী? সংক্ষিপ্ত উত্তর—প্রবাসীদের পাঠানো আয়; যাঁরা অনাবাসী ভারতীয় (এনআরআই) নামে পরিচিত। এসব ব্যক্তি মাধপুর গ্রামের ব্যাংক ও ডাকঘরে প্রতিবছর কোটি কোটি রুপি জমা রাখেন।

মধ্য-আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে নির্মাণ ব্যবসায় গুজরাটিদের আধিপত্য একচেটিয়া। রাজ্যটির প্রবাসীদের এক বড় অংশই থাকে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে। তবে অনেকে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও নিউজিল্যান্ডেও থাকেন।

কচ্ছ জেলা পঞ্চায়েতের সাবেক সভাপতি পারুলবেন কারা বলেন, মাধপুরের অনেক বাসিন্দা বিদেশে ব্যবসা–বাণিজ্য করলেও গ্রামের সঙ্গে তাঁদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। তাঁরা যে দেশগুলোতে থাকেন ও কাজ করেন, সেখানকার ব্যাংকে না রেখে এ গ্রামের ব্যাংকেই অর্থ রাখতে পছন্দ করেন।

একটি জাতীয় ব্যাংকের মাধপুর গ্রাম শাখার একজন ব্যবস্থাপক মনে করেন, গ্রামটির এতটা সমৃদ্ধির মূল কারণ বিপুল অঙ্কের আমানত। তিনি জানান, গ্রামটিতে পানি, সব ধরনের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও সড়কের মতো মৌলিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। অনেকগুলো বাংলো ঘর আছে। রয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়, হ্রদ, মন্দিরও।