পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচনে বিজয়ী তৃণমূলের দুই প্রার্থীর শপথ গ্রহণ নিয়ে অবাঞ্ছিত ঘটনার জেরে রাজ্যের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস গতকাল মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন। আজ বুধবার এই মামলার শুনানি হতে পারে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের এজলাসে।
মামলা দায়েরের পর রাজ্যপাল বলেছেন, ‘কেউ যদি আমার সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করেন, তবে তিনি যিনিই হোন, তাঁকে ভুগতে হবে।’ রাজ্যপাল এ কথাও বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী আমার সাংবিধানিক সঙ্গী। আমি সেই হিসেবেই তাঁকে মর্যাদা দিই। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা নিয়ে মানহানির মামলা করা হয়েছে। এবার বিচার করবেন আদালত।’
মামলার সূত্রপাত এই রাজ্যের উপনির্বাচনে বিজয়ী দুই তৃণমূল বিধায়কের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে। রাজ্যপাল চাইছেন, রাজভবনে এসে শপথ নেওয়া হোক। আর মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন, শপথ হোক বিধানসভা ভবনে। আর এটাই মেনে নিতে পারছিল না তৃণমূল। তৃণমূলের দুই বিজয়ী বিধায়ক হলেন অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রেয়াত হোসেন সরকার। এবারের লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই গত ১ জুন নির্বাচনের শেষ দিনে লোকসভার সঙ্গে রাজ্যের দুটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আসন দুটি হলো, উত্তর চব্বিশ পরগনার বরাহনগর ও মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা আসন। এই দুই আসনে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী যথাক্রমে অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রেয়াত হোসেন সরকার।
বিধানসভা ভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান করার দাবিতে ওই জয়ী দুই বিধায়ক ২৬ জুন থেকে আম্বেদকরের ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে আসছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা রাজভবনে শপথ গ্রহণ না করার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলেন, ‘কেন রাজভবনে যেতে হবে, কেন উনি বিধানসভা ভবনে আসবেন না? রাজভবনে যা কীর্তিকলাপ চলছে, সেখানে যেতে মেয়েরা ভয় পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তারা।’
দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না মুখ্যমন্ত্রী মমতার। এরই মধ্যে রাজ্যপালের দপ্তর ও বাসভবন রাজভবনের এক নারী কর্মীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। এই ঘটনা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়। যদিও এ ঘটনার কথা অস্বীকার করা হয়েছে রাজভবনের তরফ থেকে।
নিয়ম হলো, এই নবনির্বাচিত দুই বিধায়ককে শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। সেই লক্ষ্যে রাজ্যপালের দপ্তর রাজভবনে এই শপথ গ্রহণের জন্য ২৬ জুন তারিখ নির্ধারণ করেন। তারিখ ঘোষণার পরেই শপথ গ্রহণ নিয়ে শুরু হয় জটিলতা। তৃণমূল জানিয়ে দেয়, রাজভবনে নয়, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান করতে হবে বিধানসভা ভবনে। কিন্তু তাতে সায় দেননি রাজ্যপাল। আর এ নিয়ে জটিলতা বাড়তে থাকে। উত্তপ্ত হয় রাজনীতি।
২৬ জুন কলকাতার কেন্দ্রস্থল ধর্মতলার স্বাধীনতাসংগ্রামী, রাজনীতিবিদ, পণ্ডিত বি আর আম্বেদকরের ভাস্কর্যের পাদদেশে শপথ গ্রহণের দাবি জানিয়ে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান ধর্মঘটে বসেন জয়ী দুই প্রার্থী। তাতে লেখা—‘শপথ গ্রহণের জন্য আমরা আপনার অপেক্ষায় আছি’।