ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল আরও ৭ দিন মুক্ত থাকতে চান। শারীরিক কারণে সুপ্রিম কোর্টের কাছে তিনি এই আবেদন জানিয়েছেন।
আবগারি (মদ) মামলায় অর্থ পাচারের অভিযোগে কেজরিওয়ালকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) গত ২১ মার্চ গ্রেপ্তার করে। সেই গ্রেপ্তার অবৈধ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে কেজরিওয়াল মামলা করেন। নির্বাচনী প্রচারের স্বার্থে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। আগামী ১ জুন ভারতের লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে ২ জুন কেজরিওয়ালকে তিহার কারাগারে ফেরত যেতে হবে।
এই অবস্থায় দিল্লির ভোট মিটে যাওয়ার পরেই কেজরিওয়াল তাঁর জামিনের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানোর আবেদন করেন। দিল্লির মন্ত্রী আতিশি পিটিআইকে সে কথা জানিয়েছেন।
কেজরিওয়াল এক সপ্তাহ বাড়তি সময় চেয়েছেন শারীরিক কারণে। আবেদনে তিনি বলেছেন, এই সময়ের মধ্যে তিনি কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে চান। তাঁর দল আম আদমি পার্টি (আপ) থেকে বলা হয়েছে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর ওজন ৭ কেজি কমে গেছে, তা ছাড়া তাঁর শরীরে ‘কিটোন’–এর মাত্রা অনেকটাই বেড়ে গেছে। ‘কিটোন’ হলো এক ধরনের অ্যাসিড, যা চর্বি থেকে শক্তি সঞ্চয়ের সময় শরীরে সৃষ্টি হয়। এর মাত্রা বেড়ে গেলে গুরুতর শারীরিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
আপ–এর পক্ষ থেকে এই তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, দিল্লির ম্যাক্স হাসপাতালে কেজরিওয়ালের বেশ কিছু শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে। পেট–সিটি স্ক্যানসহ আরও কিছু পরীক্ষা করার প্রয়োজন। সেই কারণে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর জামিনের মেয়াদ আরও ৭ দিন বাড়ানোর আবেদন করেছেন।
ইডির তীব্র বিরোধিতা অগ্রাহ্য করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও দীপংকর দত্ত ১০ মে কেজরিওয়ালকে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। রায়ে বলা হয়েছিল, এই সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক প্রচার করলেও তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। সচিবালয়ে যেতে পারবেন না। কোনো ফাইলে সই করতে পারবেন না। ১ জুন ভোট মিটে গেলে পরের দিনই তাঁকে তিহার কারাগারে ফেরত যেতে হবে।
বিজেপি সুপ্রিম কোর্টের ওই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের ওই রায় ‘রুটিন ও স্বাভাবিক নয়’। বহু মানুষ মনে করেন, কেজরিওয়ালকে ‘বিশেষ সুবিধা’ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিচারপতিরা বলেছিলেন, তাঁরা আইন অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জামিন গ্রাহ্য হওয়ার দিনেই কেজরিওয়ালের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি অনুরোধ করেছিলেন, জামিনের মেয়াদ আরও কিছু দিন বাড়িয়ে দিতে। যেহেতু ৪ জুন ভোটের ফল প্রকাশের দিন। বিচারপতিরা অবশ্য সেই আবেদন অগ্রাহ্য করেছিলেন।
নির্বাচনী প্রচারে কেজরিওয়াল প্রতিদিনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করছেন। ১৬ মে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টের কাছে কেজরিওয়ালের দেওয়া ভাষণের উল্লেখ করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী জনতার উদ্দেশে বলছেন আপ–কে ভোট দিয়ে জেতালে তাঁকে আর ২ জুন কারাগারে ফিরে যেতে হবে না। মেহতার মতে, এই ভাষণ বিচারব্যবস্থার গালে চড় মারার শামিল। অতএব, তাঁর জামিন বাতিল করা হোক।
সেই আরজি বিচারপতিরা আমলে নেননি। তাঁরা বলেছিলেন, কেজরিওয়াল হয়তো অনুমানের ভিত্তিতে ওই মন্তব্য করেছিলেন। কারও অনুমানের ভিত্তিতে তাঁরা কিছু করতে পারেন না।
এখন দেখার, সুপ্রিম কোর্ট শারীরিক কারণে কেজরিওয়ালের আবেদন গ্রাহ্য করেন কি না। গ্রাহ্য হলে কেজরিওয়াল কারাগারের বাইরে বসে ভোটের ফল দেখতে পারবেন। বিজেপিকে সরিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোট সরকার গঠনের অবস্থায় এলে কেজরিওয়াল অন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনাতেও অংশ নিতে পারবেন।