ভারতজুড়ে ক্ষমতাসীন বিজেপিবিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে বিরোধী দলগুলোর প্রস্তাবিত সম্মেলন পিছিয়ে গেল। ১২ জুন বিহার রাজ্যের রাজধানী পাটনায় ওই সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল।
গতকাল রোববার বিহারের শাসক জোট জেডিইউর পক্ষ থেকে সম্মেলন কিছুদিন পিছিয়ে দেওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়। জেডিইউপ্রধান ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ওই সম্মেলনের প্রধান উদ্যোক্তা।
আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন পেছানোর কথা জানানো না হলেও এটা স্পষ্ট যে ১২ জুন তা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। সম্মেলনের নতুন সম্ভাব্য দিন ২৩ জুন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সম্মেলন পেছানো হচ্ছে প্রধানত কংগ্রেস, ডিএমকে ও সিপিএমের অনুরোধে। কংগ্রেস জানিয়েছে, ১২ জুন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধীর পক্ষে পাটনায় থাকা সম্ভব হবে না। রাহুল এখন বিদেশে রয়েছেন। খাড়গেরও ওই দিন অসুবিধা রয়েছে।
কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ জেডিইউ নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন, খাড়গে ও রাহুল দুজনেই সম্মেলনে থাকতে চান। সে জন্য অন্য তারিখ ঠিক হলে তাঁরা উপস্থিত থাকতে পারবেন। তবে একান্তই তা সম্ভব না হলে কংগ্রেসের অন্য নেতা অবশ্যই সম্মেলনে হাজির থাকবেন।
কংগ্রেসের অসুবিধার কথা জানানোর পরপরই ডিএমকেপ্রধান ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন ওই দিন তাঁর অসুবিধার কথা জানান। প্রায় একই সঙ্গে একই ধরনের অসুবিধার কথা জানান সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরিও। এ পরিস্থিতিতে জেডিইউ সম্মেলনের দিন পিছিয়ে দেওয়া সমীচীন হবে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
দলের এক নেতা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, প্রথম সম্মেলনে এতগুলো বড় দলের নেতারা উপস্থিত না থাকলে তার অন্য রকম অর্থ করা হতে পারে।
বিজেপিবিরোধী ঐক্য স্থাপনের চেষ্টায় কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে, রাহুল ও অন্য নেতাদের সঙ্গে নীতীশ কুমার ও আরজেডি নেতা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব প্রথম বৈঠক করেছিলেন গত ১২ এপ্রিল। ওই বৈঠককে রাহুল ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। তখনই ঠিক হয়েছিল, ইউপিএ জোটসঙ্গীদের সঙ্গে কংগ্রেস নেতারা ঐক্য নিয়ে কথা বলবেন, নীতীশ বরং কথা বলুন যাঁরা ইউপিএ ও এনডিএ কোনো জোটেই নেই অথচ বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়তে রাজি, তাঁদের সঙ্গে।
সেই বোঝাপড়ার পর থেকে নীতীশ একে একে বৈঠক করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব, ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন, মহারাষ্ট্রের এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার ও শিবসেনা (উদ্ধব) নেতা উদ্ধব ঠাকরে, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও ও ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনের সঙ্গে।
একই ধরনের উদ্যোগ নেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। সুপ্রিম কোর্টের রায় উপেক্ষা করে দিল্লির নির্বাচিত সরকারের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি যে অধ্যাদেশ জারি করেছে, তা যাতে রাজ্যসভার অনুমোদন না পায়, সে জন্য কেজরিওয়াল বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন। এ নিয়ে কংগ্রেসের মত আদায়ের জন্য তিনি খাড়গে ও রাহুলের সঙ্গে বৈঠকে বসার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন।
এই দুই উদ্যোগের মধ্যে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনকে কেন্দ্র করেও বিজেপিবিরোধী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়। সংসদের অভিভাবক রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে উদ্বোধন না করিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন উদ্বোধন করছেন, সে প্রশ্ন তুলে ২৪টি বিরোধী দল ওই অনুষ্ঠান বর্জন করে।
এমন সময়ে বিরোধী ঐক্য ক্রমে দানা বাঁধছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে রাহুল গান্ধীও বারবার বিজেপিবিরোধী ঐক্যের পক্ষে কথা বলছেন। মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এই জোট শুধু বিভিন্ন বিজেপিবিরোধী দলের নয়, এটা হলো এক আদর্শগত জোট। বিজেপির একদর্শী ও কর্তৃত্ববাদী আদর্শের বিরুদ্ধে বহুদর্শী গণতান্ত্রিক আদর্শের লড়াই।
পাটনায় বিরোধী দলগুলোর সম্মেলন করার পরামর্শ নীতীশ কুমারকে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্দেশ্য, ঐক্য স্থাপনের উদ্যোগ যাতে কংগ্রেসের হাতে চলে না যায়। কংগ্রেস চেয়েছিল সম্মেলন শিমলায় করতে, যাতে অসুস্থ সোনিয়া গান্ধী কিছু সময়ের জন্য হলেও উপস্থিত থাকতে পারেন। তবে সম্মেলনস্থল নিয়ে কংগ্রেস জেদাজেদিতে যায়নি। নীতীশের ওপরেই ভার ছেড়ে দিয়েছে।