প্রবল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরের প্রথম পর্বের ভোট হলো। বেলা তিনটা পর্যন্ত ভোটের হার ৫০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আজ বুধবার ভোট হলো কাশ্মীর উপত্যকা ও জম্মুর মোট ২৪ আসনে। জম্মু–কাশ্মীর বিধানসভার মোট আসন ৯০।
জম্মু–কাশ্মীরের মুখ্য নির্বাচন অফিসার পি কে পোল জানিয়েছেন, ৬০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পড়বে বলে তাঁদের অনুমান।
ভোট গ্রহণ শুরু হয় সকাল সাতটা থেকে। ঠিক এক দশক পর অনুষ্ঠিত বিধানসভার এই ভোট ঘিরে উৎসাহের অন্ত নেই। শেষবার ভোট হয়েছিল ২০১৪ সালে। পিডিপির সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গড়েছিল বিজেপি। ২০১৮ সালে সেই সরকারের পতনের পরের বছর জম্মু–কাশ্মীরের ইতিহাসই বদলে যায়। খারিজ হয়ে যায় রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ। রাজ্য দ্বিখণ্ডিত হয়। জম্মু–কাশ্মীর ও লাদাখ দুটি পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়।
কেন্দ্রশাসিত হলেও জম্মু–কাশ্মীরের বিধানসভা বাতিল হয় না। এই প্রথম সেই বিধানসভার ভোট হচ্ছে। বিরোধীরা বলছেন, ক্ষমতাশালী হলে প্রথম কাজ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে আনা। সেই সঙ্গে ফিরিয়ে আনা হবে হৃতগৌরব। জম্মুতে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ বিজেপি ও কংগ্রেস। উপত্যকার লড়াই প্রধানত ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি)–কংগ্রেস–সিপিএম জোটের সঙ্গে পিডিপির। অবশ্য এই প্রথম উপত্যকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। ভোটে নেমে পড়েছেন জামায়াতে ইসলামির সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে জোট বেঁধেছে সদ্য তৈরি আওয়ামি ইত্তেহাদ পার্টি। সরকারের চোখে দুই সংগঠনই নিষিদ্ধ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী।
বুধবার সকালেই সবাইকে নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার এই সুযোগ। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও এক বার্তায় বলেন, ভয় কাটিয়ে প্রত্যেকের উচিত ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রার্থীদের ভোট দেওয়া, যাতে মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পায় ও উন্নয়ন গতি লাভ করে। রাহুল মনে করিয়ে দেন, এই প্রথম দেশের ইতিহাসে কোনো রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে। মানুষকে ভোটের মাধ্যমে এই অবিচারের জবাব দিতে হবে। শেষ করতে হবে অন্যায়–অবিচারের দিন।
বুধবার ভোট হলো কাশ্মীর উপত্যকার ১৬ ও জম্মুর ৮ আসনে। মোট প্রতিদ্বন্দ্বী ২১৯ জন, যাঁদের অধিকাংশই স্বতন্ত্র। এই স্বতন্ত্রদেরই এবারের তিন পর্যায়ের ভোটের নিয়ামক মনে করা হচ্ছে, যেহেতু তাঁদের মধ্যেই রয়েছে জামায়াতে ইসলামি ও আওয়ামি ইত্তেহাদ পার্টির প্রার্থীরা।
এই পর্বের উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির মেয়ে ইলতিজা মুফতি। তিনি লড়ছেন বিজবেহরা কেন্দ্র থেকে। পুলওয়ামা কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়েছেন পিডিপির তরুণ নেতা ওয়াহিদ পারা। কুলগাম কেন্দ্র থেকে লড়াই করছেন সিপিএমের প্রবীণ নেতা মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি। ডুরু থেকে ভাগ্য পরীক্ষায় নেমেছেন এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক গুলাম আহমেদ মীর। রাজপোরার লড়াই এনসির গোলাম মহিউদ্দিন মীরের সঙ্গে পিডিপির সৈয়দ বশির আহমেদের মধ্যে। এই ভোটে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক হলেও পিডিপি লড়ছে একক শক্তিতে। দক্ষিণ কাশ্মীরে তাদের মূল লড়াই এনসির সঙ্গে। তৃতীয় শক্তি জামায়েতের প্রার্থীরা।