ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

চণ্ডীগড়ের সেই রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সাজা পেতে হবে

ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের রাজধানী চণ্ডীগড় পৌরসভার মেয়র নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অনিল মাসিহকে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আজ সোমবার ওই মামলার শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, স্পষ্টতই তিনি ব্যালট পেপারে কারচুপি করেছেন। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছেন। তাঁকে সাজা পেতেই হবে।

শুধু তা-ই নয়, গত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ভোটের ব্যালট পেপারগুলো পরীক্ষা করে তার ভিত্তিতেই প্রধান বিচারপতি জয়-পরাজয় নির্ধারণ করবেন বলে জানান। এ জন্য সেই দিনের সব ব্যালট পেপার আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে তাঁর এজলাসে হাজির করার নির্দেশ দেন।

চণ্ডীগড় প্রশাসনের পক্ষে দেশের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আপত্তি জানিয়ে বলেন, কিছু ব্যালট পেপার ছেঁড়া থাকলেও থাকতে পারে। বিচারপতিরা বরং নতুন নির্বাচনের নির্দেশ দিন। ওই প্রস্তাবে তীব্র আপত্তি জানান মেয়র পদে পরাজিত ঘোষিত আম আদমি পার্টির (আপ) প্রার্থী কুলদীপ কুমারের আইনজীবী গুরমিন্দর সিং।

কুলদীপ বলেন, সেই দিনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অনিল মাসিহ বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের সদস্য। যে আটটি ব্যালট পেপার তিনি খারিজ করেছেন, প্রতিটিই বৈধ ছিল। যে যে কারণে ব্যালট পেপার খারিজ করা যায়, তার একটিও ছিল না, তবু তিনি ওই কাজ করেছিলেন। প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, ব্যালট পেপার দেখে তিনি আগামীকাল সিদ্ধান্ত নেবেন।

তুষার মেহতা পরবর্তী শুনানি আগামী বুধবার রাখার অনুরোধ জানান। প্রধান বিচারপতি তা খারিজ করে বলেন, যেভাবে কাউন্সিলর কেনাবেচা হচ্ছে (ঘোড়া কেনাবেচা বা হর্স ট্রেডিং), তা খুবই উদ্বেগের।

সুপ্রিম কোর্টে শুনানির আগের দিন গতকাল রোববার রাতে ওই নির্বাচনে জয়ী ঘোষিত বিজেপির মেয়র মনোজ সোনকর ইস্তফা দেন। সেদিনই বিজেপি ঘোষণা করে, আম আদমি পার্টির তিন কাউন্সিলর তাদের দলে যোগ দিয়েছেন। বিজেপি ওই দাবি জানিয়ে তিনজনের নামও প্রকাশ করে। তাঁরা হলেন পুনম দেবী, নেহা ও গুরচরণ কালা।

বিজেপির দাবি, এই তিনজন যোগ দেওয়ার ফলে পৌরসভায় তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। নতুন করে ভোট হলে তারাই জিতবে। ওই খবরের জন্যই প্রধান বিচারপতি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এখন দেখার, ব্যালট পেপার পরীক্ষার পর প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রর এজলাস কাল মঙ্গলবার কী নির্দেশ দেন।

চণ্ডীগড় পৌরসভার মেয়র পদের ভোটে এমনিতে বিজেপির জয়ের কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। গত ৩০ জানুয়ারির ভোটের সময় দলীয় আনুগত্য ছিল এই রকম—পৌরসভার মোট কাউন্সিলর ৩৫। বিজেপির কাউন্সিলর ১৪, আম আদমি পার্টির ১২, কংগ্রেস ৮, শিরোমনি অকালি দল ১। এই ৩৫ জনের সঙ্গে ভোটদানের অধিকারী চণ্ডীগড়ের লোকসভা সংসদ সদস্য। বর্তমানে ওই আসন রয়েছে বিজেপির কিরণ খেরের কাছে।

গত ৩০ জানুয়ারির ভোটে বিরোধীদের আটটি ব্যালট পেপার বাতিল করা হয়েছিল। বিজেপি প্রার্থী ১৬ ভোট পেয়ে জয়ী ঘোষিত হয়েছিলেন। এবার আম আদমি পার্টির ৩ কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় তাদের মোট সংখ্যা বেড়ে হয় ১৭। সংসদ সদস্যদের সমর্থন নিয়ে সংখ্যাটা হচ্ছে ১৮। অকালি দলের সমর্থন নিয়ে ১৯। বিজেপি মনে করছে, সুপ্রিম কোর্ট নতুন করে ভোটের নির্দেশ দিলে তাদের জয় অবধারিত।

আজ সোমবার রিটার্নিং কর্মকর্তা অনিল মাসিহকে এজলাসে হাজির হতে বলা হয়েছিল। প্রধান বিচারপতির জেরার জবাবে তিনি স্বীকার করেন, আটটি ব্যালট পেপারে তিনি ‘ক্রস’চিহ্ন দিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি তখন তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনার কথা মতো আপনার কাজ ব্যালট পেপারে সই করা। কিন্তু আপনি “ক্রস”চিহ্ন দিয়েছেন কেন?’

অনিল মাসিহ তখন বলেন, ব্যালট পেপারগুলো প্রার্থীরা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। নষ্ট করেছিলেন। অসন্তুষ্ট প্রধান বিচারপতি তখন সলিসিটর জেনারেলকে বলেন, তাঁকে শাস্তি পেতে হবে। তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছেন।

স্বাধীন ভারতে এই প্রথম দেশের প্রধান বিচারপতির এজলাসে কোনো রিটার্নিং কর্মকর্তাকে হাজির হতে হলো। জেরার মুখেও পড়তে হলো। আগের দিনের শুনানির সময় ওই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাজের জন্য মেয়র নির্বাচনকে প্রধান বিচারপতি ‘গণতন্ত্রের হত্যা, গণতন্ত্রের পরিহাস’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।