বিলকিস বানুর ধর্ষক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুনের আসামিদের মুক্তির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন বিবেচনা করতে রাজি হয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এনভি রমনা আজ মঙ্গলবার বিষয়টি দ্রুত বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
বিলকিস বানুকে ধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের ৭ সদস্যকে হত্যার অপরাধে ১১ জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল। ১৪ বছর সাজার পর ওই অপরাধীদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাট সরকার। ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে তাঁদের ক্ষমা করা হয়। গুজরাট সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ভারতজুড়ে তোলপাড়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।
চলছে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র, সিপিএম নেত্রী সুভাষিণী আলী, সাংবাদিক রেবতী লাল ও অধ্যাপক রূপরেখা ভার্মা সুপ্রিম কোর্টের কাছে মুক্তির সিদ্ধান্ত বাতিলের আবেদন করেছেন। প্রধান বিচারপতি সেই আবেদন দ্রুত শোনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আবেদনকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বাল, অভিষেক মনু সিংভি ও অপর্ণা ভাট মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতিকে বলেন, অপরাধীদের মুক্তির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ তাঁরা চ্যালেঞ্জ করছেন না। কিন্তু যেভাবে ও যে যুক্তিতে গুজরাট সরকার অপরাধীদের মুক্তি দিয়েছে, তা পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছেন। মহুয়া মৈত্র তাঁর আবেদনে বলেন, গুজরাট সরকারের সিদ্ধান্ত পূর্ণভাবে খতিয়ে দেখা হোক। অপরাধীকে ক্ষমা করতে রাজ্যের ক্ষমতার অপব্যবহার হওয়া উচিত নয়। তাঁর আবেদন, সর্বোচ্চ আদালত এই বিষয়ে এক সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন ঠিক করে দেবেন।
সংবাদমাধ্যমকে মহুয়া বলেন, বয়সের কারণে অথবা অসুস্থতার জন্য কাউকে ক্ষমা করা যেতে পারে। কিন্তু একযোগে ১১ জন অপরাধীকে কোন যুক্তিতে গুজরাট সরকার মুক্তি দিল, তা বোধগম্য নয়। কপিল সিব্বাল বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে নীতিগত প্রশ্ন তুলছি।’
গুজরাট দাঙ্গার বলি বিলকিস বানু। ২০০২ সালে তিনি দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। এ সময় তাঁর তিন বছরের শিশুকন্যাসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়। ২০০৮ সালে অপরাধীদের যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা হয়। মুম্বাইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতের সেই রায় বোম্বে হাইকোর্টেরও মান্যতা পায়। ১৪ বছর সাজার পর তাঁরা মুক্তি পান। অপরাধীদের মুক্তি দেওয়ায় বিলকিস বানু ও তাঁর পরিবারকে বিহ্বল করে তুলেছে। সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি ও তাঁর স্বামী চরম অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেছেন, এই ঘটনা বিশ্বাসের অতীত। চলতি বছরের শেষে গুজরাট বিধানসভার ভোট। নির্বাচনের আগে রাজনীতির স্বার্থে গুজরাটের শাসক দল বিজেপি আসামিদের মুক্তি দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দণ্ডপ্রাপ্ত ১১ অপরাধীর কপালে তিলক কেটে, মালা পরিয়ে ও মিষ্টি খাইয়ে বরণ করা হয়। গুজরাট বিজেপির এক বিধায়ক এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘তাঁরা অপরাধ করেছিলেন কি না, জানি না। তবে জেলে তাঁদের আচরণ ভালো ছিল। তাঁরা সবাই ব্রাহ্মণ ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ।’
মানবাধিকার রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের (পিইউসিএল) উদ্যোগে দেশের ছয় হাজার বিশিষ্ট মানুষ ইতিমধ্যেই অপরাধীদের সাজা মওকুফের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখেছেন।