উদ্বোধনের আগে অযোধ্যার রামমন্দিরের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ চলছে। গতকাল তোলা ছবি
উদ্বোধনের আগে অযোধ্যার রামমন্দিরের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ চলছে। গতকাল তোলা ছবি

অভিমত

বিজেপির ‘রামধুন’ বনাম ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ধর্মনিরপেক্ষতা 

২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন। আগামী নির্বাচনে এই মন্দির ঘিরে ফায়দা নিতে চায় বিজেপি। এ জন্য হিন্দুত্ববাদকে জাগিয়ে তুলে কংগ্রেসসহ বিরোধীদের কোণঠাসা করার ছক আঁটছে তারা। কংগ্রেসসহ ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিকেরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাচ্ছে না। কিন্তু বিজেপির হিন্দুত্ববাদের বিপক্ষে কি তারা ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজা ওড়াতে পারবে? 

গত এক পক্ষকাল যাবৎ ভারতে খবর একটাই, অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন। সোমবার, ২২ জানুয়ারি, সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সেদিন অযোধ্যায় যে রাজসয়ূ যজ্ঞ, বিরোধীরা তা থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে। তা সত্ত্বেও এই ‘রামধুন’ই (রামের বন্দনা) হতে চলেছে লোকসভা নির্বাচনের আবহ সংগীত। গত ১০ বছরে কট্টর হিন্দুত্ববাদের মোকাবিলায় বিজেপিবিরোধী শক্তি করে উঠতে পারেনি। এবার তারা আরও অসহায়।

বিজেপির তৎপরতা

তৃতীয়বার ক্ষমতাসীন হতে বিজেপির মাছের চোখ রামমন্দির। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরই বিজেপি শুরু করে দেয় সেই তৎপরতা। তৈরি হয় রামমন্দির তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট। শুধু মন্দির নয়, মন্দিরকে কেন্দ্র করে গোটা অযোধ্যা যাতে বৈশ্বিক হিন্দুত্ববাদী জনতার মূল আকর্ষণ হতে পারে, সে জন্য প্রাচীন এই জনপদকে আধুনিক করে তোলার যাবতীয় পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, সরযু নদী সংস্কার, সড়ক ও হোটেল নির্মাণ, সৌরশক্তি সরবরাহ, ইন্টারনেট ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আধুনিক এক স্মার্ট সিটি তৈরিতে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি রুপি। শুধু মন্দির নির্মাণেই খরচ আনুমানিক ১ হাজার ৮০০ কোটি রুপি, বিমানবন্দরের জন্য দেড় হাজার কোটি রুপি। সবকিছু শেষ পর্যন্ত কত রুপিতে দাঁড়াবে, কেউ জানে না। 

এত বড় একটা ‘মেগা ইভেন্ট’ নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে সরকার আগে নেয়নি। সেই ইভেন্টের সার্থকতায় দেশ-বিদেশের অন্তত ১০ হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এক মাস ধরে পরতে পরতে বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে আগ্রহ। নামীদামি শিল্পীরা গেয়েছেন রামবন্দনা। রেডিও-টিভিতে ক্ষণে ক্ষণে তা বাজছে। সেই সঙ্গে বিজ্ঞাপিত প্রধানমন্ত্রীর নানাবিধ ভাষণ, প্রতিশ্রুতি, বাণী ও নানাবিধ ‘মোদি কি গ্যারান্টি ’। কাগজে কাগজে পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন।

জি-২০ সম্মেলন শেষ হয়েছে সেই কবে, অথচ রাস্তার মোড়ে মোড়ে সহাস্য মোদির মুখ-জোড়া হোর্ডিংয়ে ভারতের বিশ্বশক্তি হয়ে ওঠার ঘোষণা। ‘কাল্ট’ কিংবা ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ কীভাবে গড়তে হয়, আজকের বিজেপি সেই নিদর্শন জ্বলজ্বলে করে তুলেছে। অযোধ্যা পর্ব তার সর্বশেষ নমুনা।

কী করছেন নরেন্দ্র মোদি

প্রধানমন্ত্রীই ২২ জানুয়ারি অযোধ্যার মূল আকর্ষণ। তিনি নিজেই বলেছেন, ভগবান রাম হয়তো এই কাজটুকু করার জন্যই তাঁকে ধরাধামে পাঠিয়েছেন। ঈশ্বর আরাধনা কীভাবে সর্বজনীন করে তুলতে হয়, তাঁর চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। কেদারনাথের গুহায় ধ্যানরত নরেন্দ্র মোদির ছবি, নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন, রামমন্দিরের গর্ভগৃহের শিলান্যাস, সর্বত্র নিজেকে মধ্যমণি করে তোলার মধ্য দিয়ে নিজেকে তিনি ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ হিসেবে জাহির করেছেন। এবারও আগাম জানিয়ে রেখেছেন, মন্দির উদ্বোধন ও রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার জন্য কীভাবে শুদ্ধাচারী হবেন। টানা ১১ দিন ব্রত পালন করবেন। কৃচ্ছ্রসাধন করবেন। কার্যত উপবাসী হবেন। দিনান্তে শুধু সামান্য সাত্ত্বিক আহার। মৌন থাকার চেষ্টা করবেন। মাটিতে শয়ন করবেন। মন শান্ত রাখতে জপ তপ করবেন। মন প্রাণ শরীর নিবেদন করবেন ঈশ্বরকে।

সেই জন্য মহারাষ্ট্রে গিয়ে মোদি নাসিকের গোদাবরী নদীর তীরে কালারামমন্দিরের ঝকঝকে তকতকে প্রাঙ্গণে ঝাড়ু লাগালেন। ১৪ বছর বনবাসের কিছুটা সময় রামচন্দ্র নাকি ওখানে পঞ্চবটীতে কিছুকাল ছিলেন। অন্ধ্র প্রদেশের বীরভদ্র মন্দিরে পূজা দিয়ে পুতুলনাচের রামলীলা দেখলেন। কেরালা ত্রিশূর জেলায় গিয়ে গুরুবায়ুর মন্দিরে পূজা দিলেন। গেলেন শ্রীরামস্বামী মন্দিরেও। উত্তর ভারতে পায়ের নিচে জমি যতটা শক্ত, দাক্ষিণাত্যে বিজেপি ততটাই নড়বড়ে। স্পষ্টতই সেখানেও হিন্দুত্ববাদী চেতনার বিকাশে চেষ্টার ত্রুটি তিনি রাখছেন না। 

এভাবে টানা ১১ দিনের ঈশ্বর আরাধনা তিনি শেষ করবেন অযোধ্যায়। আজকের ভারতে অযোধ্যা বিন গীত নাই। সব গণমাধ্যমে অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচারের অলিখিত নির্দেশ জারির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে ওই দিন বেলা আড়াইটা পর্যন্ত অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, যাতে জনগণ অনুষ্ঠান দেখতে পারেন। বিদেশের সব দূতাবাসকে বলা হয়েছে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে।

দোলাচল সত্ত্বেও বিরোধীরা মুখ ফিরিয়ে

হিন্দুত্বের প্রশ্নে বিরোধীদের নাস্তানাবুদ করতে বিজেপি ও সংঘ পরিবার ভেবেচিন্তেই ছক তৈরি করেছে। উপলক্ষের সঙ্গে গোটা ভারত জড়িত প্রতিপন্ন করতে প্রধান বিরোধী দলের প্রায় সবাইকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রধান লক্ষ্য ছিল অবশ্যই কংগ্রেস। তাদেরই উদ্যোগে বিজেপি বিরোধিতায় দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুত্ববাদী চরিত্র রক্ষার জন্য ‘ইন্ডিয়া’ জোট তৈরি হয়েছে। আমন্ত্রণ রক্ষা করে মল্লিকার্জুন খাড়গে ও সোনিয়া গান্ধী অযোধ্যায় গেলে তাঁদের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ চরিত্রের স্বরূপ উদ্‌ঘাটনে বিজেপি উঠেপড়ে লাগত। না গেলেও বিজেপির লাভ। সহজেই কংগ্রেসকে হিন্দুবিরোধী বলে দাগিয়ে দেওয়া যাবে।

গোটা অনুষ্ঠান বিজেপির ‘সংকীর্ণ রাজনীতি’ জানিয়ে কংগ্রেস আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করার আগে থেকেই তারা সেই প্রচারে নেমেছে। যদিও সেই প্রচার জোলো করে দিয়েছেন দেশের চার শঙ্করাচার্য। তাঁরা আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছেন, অযোধ্যায় যা হচ্ছে, তা সনাতন অধর্ম। নিছক রাজনীতি। শঙ্করাচার্যদের হিন্দুবিরোধী বলার হিম্মত অবশ্য বিজেপি দেখায়নি।

কংগ্রেস না এলেও বিজেপি ভেবেছিল, অযোধ্যার আমন্ত্রণ ইন্ডিয়া জোটে ভাঙন ধরাবে। বিশেষ করে শিবসেনা (উদ্ধব), এনসিপি (শারদ) কিংবা গো–বলয়ের আরজেডিতে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে প্রত্যেকে শরিকই ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কংগ্রেসের সুরে সুর মিলিয়ে সবাই বলেছেন, হিন্দুধর্মে তাঁরা বিশ্বাসী, হিন্দুত্ববাদে নয়। হিন্দুধর্ম হচ্ছে জীবনযাত্রা, হিন্দুত্ববাদ রাজনীতি। ২২ জানুয়ারি বিজেপি যা করতে চলেছে, তা নরেন্দ্র মোদির সংকীর্ণ রাজনীতি, ‘মোদি ইভেন্ট’। অযোধ্যায় তাঁরা নিশ্চয় যাবেন। তাঁদের মতো করে। ধীরে সুস্থে। 

ভোটের স্বার্থে বিরোধীদের পাল্টা উদ্যোগ

অযোধ্যার সঙ্গে হিন্দু ভোট যে জড়িত, বিরোধী শিবির তা অস্বীকার করে না। হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে জাতীয়তাবাদের মিশেল যে প্রবল আবেগ সৃষ্টি করেছে, তার মোকাবিলা করার মতো শক্তিও তাদের নেই। অধিকাংশ ভোটের ফলেই তা প্রমাণিত। এই দোলাচলে কংগ্রেস ভুগছে সোয়া শ বছরের বেশি। বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদ ঠেকাতে তারা ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে নরম হিন্দুত্ববাদে আশ্রয় খুঁজেছে। তাতে লাভ হয়নি, বরং শক্তি ক্ষয় হয়েছে। বিজেপির হাতেও তুলে দিয়েছে মেকি ধর্মনিরপেক্ষতার অস্ত্র। অযোধ্যা আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে বহু বছর পর এই প্রথম তারা নির্দিষ্টভাবে তার রাজনৈতিক দিশায় স্থির থাকার মানসিকতা দেখাল। এতে ভোট বাড়বে কি না পরের কথা, তবে ধর্মনিরপেক্ষ শিবিরকে স্পষ্ট বার্তা দিতে পারল। লড়াইটাকেও করে তুলল নীতিকেন্দ্রিক। আদর্শের।

এখানে সূক্ষ্ম একটা বিভাজন রেখা অবশ্য কংগ্রেস টেনে রেখেছে। অযোধ্যা, রাম কিংবা হিন্দুধর্মকে যে তারা অস্বীকার অথবা অবজ্ঞা করে না, তা জানিয়ে রেখেছে। ২২ জানুয়ারির আগে-পরে দলীয় নেতাদের অযোধ্যা যাওয়ার ওপরও কোনো নিষেধাজ্ঞা দলের পক্ষ থেকে আরোপ করা হয়নি। বস্তুত মকর সংক্রান্তির পুণ্য দিনে উত্তর প্রদেশের কংগ্রেস নেতারা সরযু নদীতে ‘জয় সিয়ারাম’ (জয় শ্রীরাম নয়) বলে ডুবও দিয়েছেন।

ভোট আবহে অযোধ্যা উপাখ্যান কতটা শক্তিশালী, শরিকেরাও তা বিলক্ষণ জানে। বিজেপির প্রচার অনুযায়ী তারা যে হিন্দুবিরোধী নয়, তা প্রমাণে তারাও সচেষ্ট। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই দিনেই কালীঘাটে পূজা দিয়ে সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে ‘সম্প্রীতি মিছিল’ করবেন। তাঁর কথায়, ‘বিগ্রহে প্রাণপ্রতিষ্ঠা আমাদের কাজ নয়। ওটা সাধুসন্তরা করেন। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’

শারদ পাওয়ার জানিয়েছেন, অযোধ্যা তিনি অবশ্যই যাবেন, মন্দির নির্মাণ শেষ হলে। তখন দর্শনার্থীদের এমন ভিড় থাকবে না। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল মানুষের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনায় রাজধানীতে রামচরিত মানসের ‘সুন্দরাকাণ্ড’ ও হনুমান চালিশা (হনুমান স্তুতি) পাঠের কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। উদ্ধব ঠাকরে বলেছেন, আমন্ত্রণ আসুক না আসুক, ওই দিন তাঁরা রাজ্যের কালারাম মন্দির পরিক্রমা করবেন। ওই মন্দিরেই নরেন্দ্র মোদি ঝাড়ু লাগিয়েছিলেন। 

আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদও অযোধ্যা যাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। একই সুর তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনেরও। কংগ্রেসের মতো তাঁরাও মনে করেন, ধর্মকে আঁকড়ে বিজেপি দেশের সমস্যাগুলো থেকে মানুষের দৃষ্টি আড়াল করতে চাইছে। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি আগেই জানিয়েছেন, ওই দিন অযোধ্যা যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ধর্ম ও রাজনীতি তাঁদের কাছে দুটি পৃথক বিষয়। 

একমাত্র জেডি (ইউ) বলেছে, আমন্ত্রণ পেলে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। রামমন্দির ট্রাস্ট আমন্ত্রণ জানাচ্ছে দলের সভাপতিদের। নীতীশ কুমার অযোধ্যা গেলে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে সেটা যেমন বড় ধাক্কা হবে, তেমনই বিজেপির হবে রাজনৈতিক জয়। বিজেপির জোটে না থাকলেও ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কও অযোধ্যা যাচ্ছেন না। এই উপলক্ষে তিনি ৪ হাজার কোটি রুপি খরচ করে পুরীর জগন্নাথ মন্দির ঘিরে তৈরি করিডরের উদ্বোধন সেরে ফেলছেন।

অযোধ্যা উন্মাদনা বনাম ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা

অযোধ্যা ঘিরে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উন্মাদনার মধ্যে এই মুহূর্তে গণমাধ্যমে বড়ই নিষ্প্রভ কংগ্রেসের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’। ১৪ জানুয়ারি মণিপুরের ইম্ফল থেকে ঘোষিত কর্মসূচি মেনে রাহুল গান্ধী যাতে যাত্রা শুরু করতে না পারেন, সে জন্য বিজেপিশাসিত মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। নির্দিষ্ট স্থানে যাত্রা শুরুর অনুমতি দেননি। পদযাত্রার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। সমাবেশের স্থান বদলাতে কংগ্রেসকে বাধ্য করেছেন। 

প্রথমবারের ভারত জোড়ো যাত্রা মোদি অনুগত ‘গোদি মিডিয়া’ যেভাবে উপেক্ষা করেছিল, এবারের যাত্রাও তেমনই ‘কাব্যে উপেক্ষিতা ঊর্মিলা’। অযোধ্যার বিরামহীন ঢক্কানিনাদে গণমাধ্যমে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা অশ্রুত ও অদৃশ্যপ্রায়। এবারের যাত্রা হেঁটে ও যানবাহিত। মণিপুর, নাগাল্যান্ড, আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওডিশা, ছত্তিশগড়, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও গুজরাট হয়ে মুম্বাইয়ে শেষ হওয়ার কথা এই যাত্রা। মোটামুটি ৬৬ দিনের কর্মসূচি। প্রথম ভারত জোড়ো যাত্রায় রাহুল হেঁটেছিলেন পাঁচ মাস। এবারের যাত্রা দুই মাসের মতো। কিন্তু শেষ হবে কি?

প্রশ্নটা উঠছে। কারণ, লোকসভা ভোট কিছুদিন এগিয়ে আনার সম্ভাবনা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা চলছে। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোট হয়েছিল ১১ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত। পাঁচ সপ্তাহ ধরে। নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছিল ঠিক এক মাস আগে, ১০ মার্চ। অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট বা ভোট অন অ্যাকাউন্ট পাস করতে সেবার বাজেট অধিবেশন ৩১ জানুয়ারি থেকে দুই সপ্তাহ চলেছিল। এবার তা চলবে ৮ দিন। ৯ ফেব্রুয়ারি বাজেট অধিবেশন শেষ হচ্ছে।

তফসিল ঘোষণার এক মাস পর আগামী মার্চ মাসে ভোট গ্রহণ শুরু হলে এপ্রিলের মধ্যেই তা শেষ করা যেতে পারে। বিজেপির একাংশের ধারণা, তেমন করা হলে রাহুলের যাত্রা ছত্তিশগড় থেকে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত বিজেপিশাসিত ছয় রাজ্যে দাপাতে পারবে না। ভোটের দামামা বেজে গেলে কংগ্রেস যাত্রা কাটছাঁট করতে বাধ্য হবে। 

অযোধ্যাকাণ্ডের পর ‘রামধুন’ ভাঁজতে ভাঁজতে বিজেপি ভোট করাবে, এটাই জনপ্রিয় রাজনৈতিক ধারণা। বিজেপির কট্টর হিন্দুত্ববাদের চ্যালেঞ্জার হয়ে ‘ইন্ডিয়া’ ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদের ধ্বজা ওড়াতে পারবে কি? লড়াইটা সব দিক থেকেই অসম।