আনন্দবাজার পত্রিকার খবর

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির নবায়নে ক্ষুব্ধ পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল

ফারাক্কা ব্যারেজ
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরকালে গত শনিবার গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি  নবায়নের আশ্বাস দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তবে গতকাল রোববার আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন হয়েছে। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, তৃণমূলের অভিযোগ, রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে চুক্তির নবায়ন হয়েছে। রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের তরফে এই চুক্তি নবায়নকে পশ্চিমবঙ্গকে ‘বিক্রি করার পরিকল্পনা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিস্তা চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তৃণমূলের তরফে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্যের বুকে রাজ্যকে এড়িয়ে রাজ্যের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়—এমন কোনো কাজ করা সহজ হবে না।
তৃণমূলের বক্তব্য, ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তিতে রাজ্য সরকারও পক্ষ। কিন্তু নবায়নের বিষয়ে রাজ্য সরকারকে কিছুই জানানো হয়নি, যা অত্যন্ত খারাপ।

পাশাপাশি বলা হয়েছে, এই চুক্তি বাবদ রাজ্য সরকারের যে পাওনা অর্থ, তা-ও বকেয়া রয়েছে। গঙ্গার ড্রেজিংয়ের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে, যা বাংলায় বন্যা ও ভাঙনের প্রাথমিক কারণ হয়ে উঠেছে।

১৯৯৬ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার পানি নিয়ে চুক্তি হয়। এতে একাধিক রাজ্য সরকারও শরিক। এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তৃণমূল বলছে, ২০১৭ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও ফারাক্কা বাঁধের বিরোধিতা করেছিলেন। বলেছিলেন, বেড়িবাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদীয়ার একাংশে গঙ্গাভাঙন নিয়ে ২০২২ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সেই চিঠির প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূল বলেছে, দুই বছর আগে মমতাও বলেছিলেন, ফারাক্কা বাঁধের জন্যই পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকাকে ভাঙনের মুখে পড়তে হচ্ছে। যার ফলে মানুষের ভিটেমাটি যেমন যাচ্ছে, তেমনই ক্ষতি হচ্ছে চাষাবাদেরও।

পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের তরফে খানিকটা হুঁশিয়ারির সুরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী অন্য দেশের সঙ্গে কোনো বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত করার অধিকার কেন্দ্রের রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রকে এটাও বুঝতে হবে, রাজ্য সরকার সহযোগিতা না করলে তিস্তার পানি বণ্টনের মতো চুক্তি থমকে থাকে। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থানের পর কেন্দ্রও সম্মত হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গকে এড়িয়ে তারা (কেন্দ্র) কিছু করবে না। অনেকের মতে, রাজ্যকে এড়িয়ে ফারাক্কা চুক্তির নবায়ন হওয়ায় তিস্তা চুক্তি আরও ঝুলে গেল।