নতুন করে ভারতের বিহার রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা কিংবা বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার দাবি তুললেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। জেডিইউর জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে শনিবার এই মর্মে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল জেডিইউর সব সাংসদ ও বিধায়ককে।
বৈঠকে ওই প্রস্তাব পাস করানো ছাড়াও দলের ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট বা কার্যনির্বাহী সভাপতি মনোনীত হন রাজ্যসভার প্রবীণ সদস্য সঞ্জয় ঝা। সঞ্জয়ের মনোনয়নও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, জেডিইউর যাঁদের সঙ্গে বিজেপির সদ্ভাব রয়েছে, সঞ্জয় তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
বিহারকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। ২০০৫ সাল থেকে নীতীশ কুমার এই দাবি জানিয়ে আসছেন। বিহারের মতো একই দাবি অন্ধ্র প্রদেশেরও। ২০১৪ সালে তৎকালীন অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্য ভেঙে গড়ে তোলা হয় তেলেঙ্গানা। সেই থেকে অন্ধ্র প্রদেশের জন্য বিশেষ মর্যাদার দাবি জোরালো হয়ে ওঠে।
তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু অমরাবতীতে রাজ্যের নতুন রাজধানী গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন; কিন্তু মোদি সরকার বিশেষ মর্যাদার দাবি পূরণ না করায় ২০১৮ সালে চন্দ্রবাবু নাইডু কেন্দ্রীয় সরকারকে সমর্থনের রাস্তা ছেড়ে চলে আসেন। এবার সেই বিজেপির সঙ্গে নতুন করে সখ্য স্থাপনের পর বিপুল ভোটে তাঁর দল জিতে এসেছে। তিনি ফের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। চন্দ্রবাবুর নির্বাচনী প্রচারে বিশেষ মর্যাদার দাবিটি ছিল অন্যতম।
নীতীশ ও চন্দ্রবাবুর দল তৃতীয় দফার মোদি সরকারের গুরুত্বপুর্ণ শরিক। দুই দলের সম্মিলিত সদস্যের সংখ্যা ২৮। সরকারের স্থিতিশীলতার জন্য যা একান্তই জরুরি। নতুন করে বিশেষ মর্যাদার দাবি তোলায় মনে করা হচ্ছে, দুই দলই চাপের রাজনীতি শুরু করল।
এই চাপের কাছে নতি স্বীকার করা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষে কঠিন। কারণ, তাঁরই আমলে চতুর্দশ অর্থ কমিশন বিশেষ মর্যাদার বিষয়টি খারিজ করে রাজ্যগুলোর জন্য কেন্দ্রীয় রাজস্ব বণ্টনের পরিমাণ ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪২ শতাংশ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে অর্থ কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছে, নতুন করে কোনো রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদাদানের দাবি আমল না দিতে।
ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদার ধারণার জন্ম। ১৯৬৯ সালে জাতীয় উন্নয়ন পর্ষদ ‘গ্যাডগিল ফর্মুলা’ মেনে সেই মর্যাদা দিয়েছিল বিভিন্ন রাজ্যকে। প্রথমে সেই মর্যাদা পায় আসাম, জম্মু–কাশ্মীর ও নাগাল্যান্ড। তারপর ১৯৭০–৭১ সালে সেই মর্যাদা দেওয়া হয় হিমাচল প্রদেশকে। পরের বছর ১৯৭১–৭২ সালে মণিপুর, মেঘালয় ও ত্রিপুরা, ১৯৭৫–৭৬ সালে সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশ এবং ২০০১–০২ সালে উত্তরাখন্ড সেই তালিকাভুক্ত হয়।
পূর্ণ বিশেষ মর্যাদা প্রাপ্তির অর্থ কেন্দ্রীয় বরাদ্দের ৯০ শতাংশ অনুদান ও মাত্র ১০ শতাংশ ঋণ। অন্যদের ক্ষেত্রে তা ৩০ শতাংশ অনুদান, ৭০ শতাংশ ঋণ। করের ক্ষেত্রেও বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত রাজ্যগুলো বিশেষ ছাড় পেয়ে থাকে।
প্রশ্ন হলো, মোদি সরকার বিহার ও অন্ধ্র প্রদেশের এই দাবি মানবে কি না? দাবি মানলে অন্য রাজ্য থেকেও নতুন করে এই দাবি যে উঠবে না, তার নিশ্চয়তা নেই। তা ছাড়া আর্থিক সংস্কারের যে নীতি সরকার নিয়েছে, এই দাবি ঠিক তার বিপরীত। নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু দুজনেই তা জানেন। তবু নতুন করে বিশেষ মর্যাদার দাবি তোলার মধ্য দিয়ে তাঁরা বিশেষ আর্থিক অনুদান আদায় করতে চান।
তাঁদের দাবি কতটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিতে পারবেন, কতটা পেলে তাঁরা সন্তুষ্ট হবেন তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে। ৪ জুন লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের দিনেই কংগ্রেস মুখপাত্র জয় রাম রমেশ জানিয়েছিলেন, তাঁর দল অন্ধ্র প্রদেশকে বিশেষ মর্যাদা দিতে প্রস্তুত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং রাজ্যভাগের সময় সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।