শুধু রাষ্ট্রপতিই নন, প্রধানমন্ত্রীও এবার ‘ভারতের’। গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইন্দোনেশিয়া সফরসূচির ছাপানো সরকারি কার্ডে তাঁকে ‘ইন্ডিয়া’র বদলে ‘প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত’ লেখা হয়েছে। বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র ওই পরিচয়লিপি প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি আজ বুধবার রাতে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় যাচ্ছেন। দেশে ফিরবেন আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাতে।
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অতিথিদের সম্মানে নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিনভর এ নিয়ে দেশজুড়ে চলে প্রবল চর্চা। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মোকাবিলায় নাজেহাল বিজেপি ও সরকার দেশের নাম বদলাতে চলেছে?
সারা দিন এই জল্পনা ও রাজনৈতিক চাপান–উতরের পর গতকাল রাতে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর জানান, দেশের নাম শুধু ‘ভারত’ রেখে ‘ইন্ডিয়া’ ছেঁটে ফেলার কোনো অভিপ্রায় সরকারের নেই। এমন জল্পনা পুরোপুরি ভিত্তিহীন, নিছকই গুজব। দেশের নাম যেমন ‘ইন্ডিয়া’ ও ‘ভারত’ রয়েছে, তেমনই থাকবে। তিনি বলেন, ‘আমি একই সঙ্গে ইন্ডিয়া ও ভারতের মন্ত্রী।’
ভারতের সংবিধানের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘ইন্ডিয়া, দ্যাট ইজ ভারত’ দুই নামেই দেশের পরিচয় দেওয়া আছে।
ইন্দোনেশিয়া সফরের কার্ডে নরেন্দ্র মোদিকে ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী’ বলা হলেও সরকারি নথিতে সম্মেলনের নামে ‘ইন্ডিয়া’ রাখা আছে। মোদি জাকার্তায় যাচ্ছেন ‘২০তম আসিয়ান-ইন্ডিয়া’ ও ‘১৮তম ইএএস’ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে। সরকারিভাবে কেন সেখানে ‘ইন্ডিয়া’ রাখা হলো, সেই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। যদিও সরকারি সূত্রমতে, অযথা কূটনৈতিক বিভ্রান্তি যাতে দেখা না দেয়, সেই কারণেই সম্মেলনের নামে ‘ইন্ডিয়া’ রাখা হয়েছে।
সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, আসন্ন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনেও মোদির আনুষ্ঠানিক পরিচিতি হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বিদেশি অতিথি অভ্যাগতরা তাঁকে কীভাবে সম্বোধন করবেন, সেই আগ্রহ শুরু হয়েছে। বিজেপির এক সূত্র জানাচ্ছে, এবার থেকে সরকারিভাবে ‘ভারত’কেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।
তথ্যমন্ত্রীর কথায় গতকাল রাতে ‘ইন্ডিয়া’ ও ‘ভারত’ বিতর্কের অবসান ঘটলেও ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর কোন বিষয় আলোচনার জন্য ভারতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে, সেই জল্পনা অব্যাহত রয়েছে। সরকার এখনো জানায়নি বিশেষ অধিবেশন ডাকার কারণ কী?
তবে গতকাল ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বৈঠকের পর ঠিক হয়েছে, কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখবেন। এতে বলবেন, দেশের মানুষ যেসব বিষয় নিয়ে ভাবিত, চিন্তিত, উদ্বিগ্ন, যেসব বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষ জর্জরিত ও সংকটাপন্ন, সেই সব জরুরি বিষয় আলোচনা করা হোক। সেসব সমস্যার মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের পাশাপাশি চীনের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যার উল্লেখ করা হবে। দাবি করা হবে আদানি প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনার। বিরোধী জোটের ধারণা, জ্বলন্ত সমস্যা থেকে দৃষ্টি ফেরাতেই সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে।