লোকসভায় বিজেপির নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য কঙ্গনা রনৌত চড় খাওয়ার পর তাঁর ২০২০ সালের বিতর্কিত টুইটার (বর্তমান এক্স) পোস্টটি আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
অভিনেত্রী থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া কঙ্গনাকে গত বৃহস্পতিবার ভারতের চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সের (সিআইএসএফ) নারী কনস্টেবল কুলবিন্দর কৌর চড় মারেন বলে অভিযোগ। গতকাল শুক্রবারের তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় কুলবিন্দরকে তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। তাঁকে আটক করে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। ঘটনা তদন্তের (কোর্ট অব ইনকোয়ারি) নির্দেশ দিয়েছে সিআইএসএফ।
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে হিমাচল প্রদেশের মান্ডি আসনে বিজেপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বলিউড তারকা কঙ্গনা। তিনি প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই জয় পেয়েছেন। তাঁর কাছে হেরেছেন কংগ্রেস নেতা বিক্রমাদিত্য সিং।
বলা হচ্ছে, ভারতে ২০২০ সালের কৃষক বিক্ষোভের সময় বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন কঙ্গনা। এ কারণে তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন কুলবিন্দর। এই ক্ষোভ থেকেই তিনি কঙ্গনাকে চড় মেরেছেন।
কুলবিন্দর পাঞ্জাবের সুলতানপুর লোধির বাসিন্দা। তাঁর স্বামীও সিআইএসএফের একজন সদস্য। কুলবিন্দরের ভাই শের সিং। তিনি একজন কৃষকনেতা। তিনি কিষান মজদুর সংগ্রাম কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।
চড় মারার ঘটনার পরের একটি ভিডিওতে কুলবিন্দরকে ২০২০ সালের কৃষক বিক্ষোভের সময়কার কঙ্গনার বিতর্কিত মন্তব্যের বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানাতে শোনা যায়। তিনি বলেন, সে সময় কঙ্গনা বলেছিলেন, কৃষকেরা অর্থের বিনিময়ে দিল্লিতে বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভ করার জন্য তাঁদের ১০০ বা ২০০ রুপি করে দেওয়া হয়েছে। সে সময় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে তাঁর (কুলবিন্দর) মা-ও ছিলেন।
ফিরে তাকানো যাক ২০২০ সালের কৃষক বিক্ষোভের দিকে। নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে তখন ভারতীয় কৃষকেরা ব্যাপক বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তাঁরা দিল্লি অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন। বিক্ষোভের মুখে পরবর্তী সময়ে (২০২১ সালে) বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিল করে সরকার।
কৃষক বিক্ষোভ চলাকালে কঙ্গনা তাঁর টুইটারে (বর্তমান নাম এক্স) একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। পোস্টে তিনি কৃষক বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক বয়স্ক নারীকে দিল্লির শাহিনবাগ আন্দোলনের সুপরিচিত মুখ বিলকিস বানো হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন, যা ছিল ভুল। একই পোস্টে কঙ্গনা দাবি করেছিলেন, ১০০ রুপির বিনিময়ে এই নারী (বিলকিস) বিক্ষোভে বসেছেন।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) প্রত্যাহার এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরির বিরোধিতা করে দিল্লির শাহিনবাগে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর শান্তিপূর্ণ অবরোধ-বিক্ষোভ শুরু হয়, যা টানা ১০১ দিন চলে। এই বিক্ষোভের অন্যতম আলোচিত মুখ ছিলেন বিলকিস। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ৮২ বছর। তিনি শাহিনবাগের ‘দাদি’ নামে পরিচিতি পান। পরবর্তী সময়ে তিনি টাইম সাময়িকীর ২০২০ সালের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় স্থান পান।
কঙ্গনা পোস্টটি দেওয়ার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। অপতথ্য ছড়ানোর জন্য কেউ তাঁকে অভিযুক্ত করেন। তাঁকে উত্তেজনা উসকে দেওয়া বন্ধ করতেও বলেন কেউ কেউ। এমনকি তাঁকে বেশ কয়েকটি আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য তাঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলা হয়। পরে পোস্টটি মুছে দেন কঙ্গনা। তবে বৃহস্পতিবার চড় খাওয়ার ঘটনার পর তাঁর সেই পোস্ট নিয়ে নতুন করে আলোচনা হচ্ছে।