কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী মনে করেন, লোকসভা ভোটের ফল এতটাই নড়বড়ে যে নবগঠিত সরকার তুচ্ছাতিতুচ্ছ যেকোনো ঘটনায় পড়ে যেতে পারে।
লন্ডনের দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার সঙ্গে আলাপকালে রাহুল এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেছেন, কোনো একটি দল এপাশ থেকে ওপাশে গেলেই সরকার পড়ে যেতে পারে। কোনো বিশেষ দলের নাম না করে তিনি বলেছেন, মোদির এনডিএর লোকজন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শিবিরেও ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে জানিয়ে কংগ্রেস নেতা বলেন, নতুন জোট সরকারকে খুবই দেখেশুনে কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে চলতে হবে। কারণ, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে মোদি সরকারের ক্ষেত্রে যা সহজ ছিল, এবারের পরিস্থিতি তেমন নয়।
রাহুল মনে করেন, এবারের লোকসভা নির্বাচনের ফল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। কারণ, এই ভোটের মধ্য দিয়ে মোদির রাজনীতি ও তাঁর ভাবমূর্তি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশের রাজনৈতিক আবহ উন্মুক্ত হয়ে গেছে। বিভিন্ন দলের প্রাপ্ত আসনসংখ্যা এমনই ভঙ্গুর যে সামান্য গোলমালেই সরকারের পতন ঘটতে পারে।
সাক্ষাৎকারে রাহুল বলেছেন, এবারের ভোটে বিজেপির বিভাজন নীতির বিরুদ্ধে মানুষ রায় দিয়েছে। মানুষের মধ্যে ঘৃণা ছড়িয়ে ক্রোধের জন্ম দিয়ে রাজনৈতিক লাভ করা যায়, বিজেপির এই ধারণা দেশের মানুষ নস্যাৎ করে দিয়েছে।
এবারের নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুসলমান সম্প্রদায়কে ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলেছেন। বলেছেন, দরিদ্র ও প্রান্তবাসী মানুষজনের সংরক্ষণ ব্যবস্থা কেড়ে নিয়ে কংগ্রেস তা মুসলমানদের দেবে। অথচ দেখা গেছে, কংগ্রেস প্রান্তিক দরিদ্র মানুষের ভোট পেয়েছে। তাদের মনে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট এই বিষয় গেঁথে দিতে পেরেছে যে চার শ আসন পেয়ে গেলে বিজেপি সংবিধান বদলে দেবে। গরিবদের সুরাহা কেড়ে নেবে।
রাহুল বলেছেন, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে যে প্রচারকাজ করেছে, এবার তা ব্যর্থ। তাঁর কথায়, যে দলটা ১০ বছর ধরে শুধু অযোধ্যা অযোধ্যা করে গেছে, তারা সেই অযোধ্যাতেই হেরে গেল! কারণ, ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানোর মধ্য দিয়ে রাজত্ব করার যে মৌলিক কাঠামো বিজেপি অবলম্বন করে এসেছে, তা চুরচুর করে ভেঙে পড়েছে।
উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ লোকসভা আসনে অযোধ্যার অবস্থান। বিজেপি প্রার্থী লাল্লু সিং সেই আসনে সমাজবাদী পার্টির (এসপি) দলিত প্রার্থী অবধেশ প্রসাদের কাছে হেরেছেন প্রায় ৫৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে। শুধু তা–ই নয়, অযোধ্যার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ৮টি লোকসভা আসনেও এবার বিজেপি হেরেছে।
বিরোধী জোটের ভালো ফলের কৃতিত্বের পেছনে ভারত জোড়ো যাত্রা ও ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার অবদান রয়েছে বলে রাহুল মনে করেন। তিনি বলেন, দেশের বিচারব্যবস্থা, গণমাধ্যম, প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি সব দরজা বিরোধীদের কাছে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই তাঁরা সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাহুল বলেন, এবারের ভোটে অনেক ধারণা কাজে এসেছে, যেগুলো তাঁরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পেয়েছেন। চলতে চলতে শিখেছেন। মানুষই তাঁদের শিখিয়ে দিয়েছেন।
প্রিয়াঙ্কার সমালোচনায় বিজেপি
কেরালা রাজ্যের ওয়েনাডে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে বিজেপি। ওই আসন থেকে রাহুল জয়ী হয়েছিলেন। গতকাল সোমবার রাহুল জানিয়ে দেন, তিনি উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলি আসনটি রেখে ওয়েনাড ছেড়ে দেবেন। সেখান থেকে উপনির্বাচনে দাঁড়াবেন তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র। বিজেপি সেই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে।
এবার তিরুবনন্তপুরম আসনে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের শশী থারুরের কাছে পরাজিত সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কেরালার রাজনীতিক রাজীব চন্দ্রশেখর আজ মঙ্গলবার বলেছেন, নির্লজ্জের মতো কংগ্রেস ওয়েনাডের জনগণের ওপর একের পর এক পারিবারিক সদস্যকে চাপিয়ে দিচ্ছে। তারা এতটাই নির্লজ্জ যে রাহুল গান্ধী অন্য এক আসন থেকেও যে লড়বেন, সেটা পর্যন্ত জানাননি।
‘এক্স’ হ্যান্ডলে রাজীব চন্দ্রশেখর এই সমালোচনা করে বলেছেন, এই কারণেই রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসকে তার তৃতীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।
রাজীব চন্দ্রশেখরের মন্তব্যের জবাব দিতে কংগ্রেস দেরি করেনি। দলের মুখপাত্র পবন খেরা এই ‘নির্লজ্জতার’ তুলনা টেনেছেন নরেন্দ্র মোদির সিদ্ধান্তের সঙ্গে। সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর টুইটের জবাবে তিনি লেখেন, ‘ঠিক যেভাবে নির্লজ্জের মতো বরোদার ভোটারদের কাছে নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে লুকিয়েছিলেন, তিনি বারানসি থেকেও দাঁড়াচ্ছেন।’
২০১৪ সালে মোদি বরোদা ও বারানসি—দুই আসনেই জিতেছিলেন। পরে তিনি বরোদা ছেড়ে দেন।
ওয়েনাড থেকে প্রিয়াঙ্কা প্রার্থী হওয়ায় উৎফুল্ল কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। আজ তিনি ‘এক্স’ হ্যান্ডলে হিন্দিতে লেখেন, ‘আর কোনো সন্দেহ নেই, আর কোনো শঙ্কাও নেই, এসে গেছেন প্রিয়াঙ্কা।’
ওয়েনাডে রাহুলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন সিপিআই নেত্রী অ্যানি রাজা। এবার সিপিআই এই আসনে কী করবে, এখনো অজানা। তবে প্রিয়াঙ্কা সংসদীয় রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অ্যানি খুশি। তিনি পিটিআইকে বলেছেন, সংসদে নারীদের সংখ্যা কমছে। তিনি চান আরও নারী সংসদে আসুন। প্রিয়াঙ্কাকে কংগ্রেস প্রার্থী করে তাই ভালো করেছে। তিনি খুব খুশি।
রায়বেরিলি রেখে রাহুলের ওয়েনাড ছাড়ার সিদ্ধান্তও সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন অ্যানি রাজা। তাঁর মতে, রাহুলের উচিত হিন্দি বলয়ে রাজনীতি করা। তাই উনি ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।