ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবন
ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবন

ভারতের ইতিহাসে কি প্রথম স্পিকার পদে নির্বাচন হতে যাচ্ছে

লোকসভার স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদ নিয়ে সহমত না হলে নির্বাচন অনিবার্য। আজ মঙ্গলবার স্পিকার পদে সরকারপক্ষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিজেপি সদস্য ওম বিড়লা। সপ্তদশ লোকসভাতেও তিনিই ছিলেন স্পিকার। বিজেপি চায় সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে।

ওম বিড়লার পাশাপাশি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কেরালা থেকে আটবার জয়ী কংগ্রেস সদস্য কে সুরেশ। প্রোটেম স্পিকার তাঁরই হওয়ার কথা ছিল। যদিও বিজেপি তাঁকে সেই দায়িত্ব না দিয়ে বেছে নেয় সাতবারের জয়ী ভর্তৃহরি মহতাবকে, যিনি এবার ভোটের আগে ওডিশায় বিজু জনতা দল (বিজেডি) ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে জয়ী হন।

স্পিকার পদে আজ পর্যন্ত কোনো দিন ভোটাভুটি হয়নি। স্বাধীনতার সময় থেকেই ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার স্পিকার সর্বসম্মতভাবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। মঙ্গলবারের মধ্যে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হলে এই প্রথম স্পিকার নির্বাচিত হবেন ভোটাভুটির মাধ্যমে। সমঝোতার আশা এ মুহূর্তে ক্ষীণ।

স্পিকার পদে সহমতের চেষ্টায় বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব দায়িত্ব দিয়েছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুকে। তাঁরা গতকাল কথা বলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে। কংগ্রেস সভাপতি তাঁদের জানান, বিজেপি–মনোনীত প্রার্থীকে মেনে নিতে তাঁদের আপত্তি নেই, যদি সংসদীয় রীতি মেনে ডেপুটি স্পিকারের পদটি বিরোধীদের ছাড়া হয়। খাড়গে তাঁদের বলেছিলেন, ‘ইন্ডিয়া’র সব শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। খাড়গে অখিলেশ যাদব, এম কে স্ট্যালিন ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন। প্রত্যেকেই বলেন, ডেপুটি স্পিকার পদ পেলে স্পিকার পদে বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন জানাবেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও ওই এক শর্ত দেন। কিন্তু তারপর রাজনাথ সিং আর খাড়গের সঙ্গে কথা বলেননি বলে রাহুল জানান। আজ দুপুর ১২টা নাগাদ রাজস্থানের কোটা-বুন্দি কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত ওম বিড়লা এনডিএর হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।। প্রায় একই সঙ্গে জমা পড়ে বিরোধী প্রার্থী হিসেবে সুরেশের মনোনয়নপত্রও।

রাহুল আজ এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুখে সহমতের কথা বলেন, অথচ কাজের সময় ওই পথে হাঁটেন না। সোমবারই তিনি বলেছিলেন, বিরোধীদের উচিত সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতা করা। বিরোধীরা তা করতে প্রস্তুত। তাই রাজনাথ সিংকে বলা হয়েছিল, রীতি অনুযায়ী সরকার ডেপুটি স্পিকার পদ বিরোধীদের ছেড়ে দিলে স্পিকার পদে সরকারি প্রার্থীকে মেনে নেওয়া হবে। রাজনাথ সিং বলেছিলেন, তিনি কংগ্রেস সভাপতিকে ফোন করবেন। কিন্তু তা করেননি। ফোন না করে সরকার খাড়গেজিকে অপমান করেছে।

একই মন্তব্য করেন কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈও। আজ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কথায় ও কাজে কোনো মিল নেই। সোমবার ঐকমত্যের কথা বললেন। অথচ মঙ্গলবার ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধীদের ছেড়ে দিতে অস্বীকার করলেন। তিনি বলেন, ‘মোদিজির অহংকার যদি একই রকম থাকে, তাহলে বিরোধীরাও সংসদের গরিমা ও গণতন্ত্র রক্ষায় তার ভূমিকা পালন করে জনগণকে সজাগ রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাবে।’

বিজেপির সাবেক সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী এ প্রসঙ্গে আজ বলেন, বিরোধী নেতাদের বলা হয়েছিল ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন যখন হবে, তখন নিশ্চিতই বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কিন্তু তাঁরা শর্তাধীন সমর্থনের কথা জানান। গণতন্ত্রে শর্ত মেনে সরকার চলে না।

ভোটাভুটি হলে এনডিএ প্রার্থীর জয় হওয়ার কথা। সরকারপক্ষে রয়েছে ২৯৩ জনের সমর্থন, বিরোধীপক্ষে ২৩২। জয়ের জন্য প্রয়োজন সাধারণ গরিষ্ঠতা।