ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে একটি স্থানীয় দৈনিকের সম্পাদক ধনবীর মাইবামকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করেছে রাজ্য পুলিশ। তাঁকে তিন দিনের জন্য পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার মণিপুরের পত্রিকার সম্পাদককে গ্রেপ্তার করা হলো।
গত ২৯ ডিসেম্বর মণিপুরের সান্ধ্য দৈনিক ‘কাংলেইপাক্কি মেইরা’র প্রধান সম্পাদক ওয়াংখেমচা শ্যামজাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া ‘হুইয়েন ল্যানপাও’ নামে মণিপুরের অপর একটি সংবাদপত্রের সম্পাদক ধনবীর মাইবামের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং ১৯২৩ সালের সরকারি গোপনীয়তা আইনভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে।
মাইবামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তাঁর সংবাদপত্রে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আক্রমণে এক পুলিশ অফিসারের মৃত্যু এবং ৯ নিরাপত্তাকর্মী আহত হওয়ার বিষয়ে এমন একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন, যা সরকারের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করেছিল।
পুলিশের ওপর সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পরে ‘হুইয়েন ল্যানপাও’–এর প্রতিবেদনের জেরে মণিপুর ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মোরেতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী পরিস্থিতির অবনতি হয় বলে মণিপুর পুলিশের অভিযোগ। মাইবামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ধর্ম ও বর্ণের ভিত্তিতে বিভেদ সৃষ্টির লক্ষ্যে এই সংবাদ প্রচার করেছেন। প্রতিবেদনটি গত বছরের ৩১ অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছিল।
এ নিয়ে মণিপুরে গত সাত দিনের মধ্যে দুজন জ্যেষ্ঠ সম্পাদককে গ্রেপ্তার করা হলো। গত ২৯ ডিসেম্বর সান্ধ্য দৈনিক ‘কাংলেইপাক্কি মেইরা’র প্রধান সম্পাদক ওয়াংখেমচা শ্যামজাইকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁকে গত রোববার (৩১ ডিসেম্বর) জামিন দেওয়া হয়েছে।
শ্যামজাইয়ের বিরুদ্ধেও প্রায় একই অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়েছে, শ্যামজাইয়ের পত্রিকার প্রতিবেদনের জেরে নির্দিষ্ট স্থানে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। মণিপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠনের সাবেক সভাপতি শ্যামজাইয়ের গ্রেপ্তারের কারণে সাংবাদিকদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা জানান, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে শ্যামজাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাইবামের গ্রেপ্তারের পরেও একই অভিযোগ করেছেন মণিপুরের সাংবাদিকেরা।
মণিপুরে গত বছরের মে মাসে যে জাতিগত সংঘাত শুরু হয়েছিল, তা এখন কিছুটা স্তিমিত। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত হয়ে গেছে, এমনটা বলা যাবে না। চলতি সপ্তাহেই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আক্রমণে অন্ততপক্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের সংঘাতে ১৭৫ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, বাস্তুচ্যুতদের অনেকেই এখনো আশ্রয়শিবিরে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে জ্যেষ্ঠ সম্পাদকদের গ্রেপ্তার রাজ্যের মানুষকে নতুন করে উদ্বিগ্ন করছে, বক্তব্য স্থানীয় সাংবাদিকদের।