টানা ১০ বছর রাজত্ব করা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ম্যাজিক যে এখনো মায়াজাল সৃষ্টি করে, উত্তর ভারতের গো–বলয়ের তিন রাজ্য এর প্রমাণ দিল। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে আর্যাবর্তের তিন রাজ্যের ফল তার প্রমাণ।
মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি কংগ্রেসের কাছ থেকে বিজেপি ছিনিয়ে নিল রাজস্থান ও ছত্তিশগড়। কংগ্রেস দখল করেছে দাক্ষিণাত্যের রাজ্য তেলেঙ্গানা। এটাই তাদের সান্ত্বনা পুরস্কার। সেখানে তারা পরাস্ত করেছে ভারত রাষ্ট্র সমিতিকে (বিআরএস)।
আগামী বছর লোকসভা ভোটের আগে এই ফলাফল শাসক বিজেপির পালে নিঃসন্দেহে বাড়তি হাওয়া। আজ সোমবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামের ভোট গণনা হবে।
ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন দিল্লিতে সেই বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার জন্য কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে জোটের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে আলাপ শুরু করেছেন।
গতকাল রোববার সকালে ভোট গণনার শুরু থেকেই বিজেপি এগোতে থাকে মধ্যপ্রদেশে। রাজস্থানেও এগিয়ে ছিল। এ দুই রাজ্যের তুলনায় ছত্তিশগড় নিয়ে বিজেপি ততটা নিশ্চিত ছিল না। প্রতিটি জনমত সমীক্ষা তো বটেই, ভোটের দিনও বুথফেরত জরিপ দেখিয়েছিল ছত্তিশগড়ে কংগ্রেসই আবার ক্ষমতায় আসছে। রাজ্যটি ১৮ বছর ধরে তাদের দখলে। মাঝে দেড় বছর (২০১৮-২০২০) কংগ্রেসের শাসন বাদ দিলে ১৫ বছর ধরে শিবরাজ সিং চৌহান এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
গতকাল ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, মধ্যপ্রদেশের ২৩০টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ১৬৩টি আসন, কংগ্রেস ৬৬টি। রাজস্থানে ২০০ আসনের মধ্যে (ভোট হয়েছে ১৯৯টিতে) বিজেপি পেয়েছে ১১৫টি, কংগ্রেস ৭০টি। ছত্তিশগড়ে ৯০ আসনের বিধানসভায় গতবার কংগ্রেস যেখানে পেয়েছিল ৬৮ আসন, এবার তারা পেয়েছে ৩৫টি। বিজেপি পেয়েছে ৫৪ আসন।
কংগ্রেস আশার আলো দেখিয়েছে শুধু তেলেঙ্গানায়। এ রাজ্যে ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় বিআরএস (আগের টিআরএস)। মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। রাজ্য গঠনের পর এই প্রথম তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করছে কংগ্রেস। তারা পেয়েছে ৬৫ আসন। বিআরএস ৩৯। এই রাজ্যে বিজেপির ফলও কিন্তু বিস্ময়কর! গতবার বিধানসভা ভোটে তারা পেয়েছিল একটি মাত্র আসন (অবশ্য লোকসভায় পেয়েছিল ৪টি)। এবার বিজেপি পেয়েছে ৮টি। হায়দরাবাদ অঞ্চলের অপ্রতিরোধ্য এআইএমআইএম পেয়েছে ৭ আসন।
ভোটের এ ফল দেখাচ্ছে, ১০ বছর ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও মোদি ম্যাজিক অটুট। প্রতিটি রাজ্যে বিজেপির পুরো প্রচার ছিল মোদিকেন্দ্রিক।
বিজেপির মোকাবিলায় কংগ্রেস শুরু করেছিল ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’। সেই যাত্রা দক্ষিণ ভারতে সফল হলেও উত্তর ভারতে সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি। এবারের ভোট তার প্রমাণ। এখন দেখার, কংগ্রেসের ঘোষণামতো রাহুল গান্ধী অরুণাচল প্রদেশ থেকে গুজরাট পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু করেন কি না। এ ভোট এটুকু অন্তত বুঝিয়ে দিল, বিরোধীদের সম্মিলিত শক্তি ছাড়া মোদির বিজেপির মোকাবিলা অসম্ভব। কংগ্রেস তো বটেই, বিরোধীদের কাছেও সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
কংগ্রেস নেতৃত্বকে এই ফল নিশ্চিতই চিন্তায় রাখবে। এটা এখন স্পষ্ট, হিন্দি হৃদয়ভূমি বা গো-বলয়ে কংগ্রেস তার প্রভাব ধরে রাখতে ব্যর্থ। একার ক্ষমতায় মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড় এবার জিতে যাবে, এমন ধারণা ভোটের শেষ দিন পর্যন্ত কংগ্রেস নেতৃত্বের মনে দৃঢ়ভাবে গেঁথে ছিল।
সেই কারণে এ দুই রাজ্য ও রাজস্থানে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের কোনো শরিককেই কংগ্রেস গুরুত্ব দেয়নি। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ সিং যাদবের সঙ্গে আসন নিয়ে রাজস্থানে কংগ্রেসের সরাসরি সংঘাতও দেখা দিয়েছিল।
কংগ্রেস ভেবেছিল, এ রাজ্যগুলোয় ভালো ফল করতে পারলে লোকসভা ভোটের জন্য ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে দর-কষাকষি সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে করা যাবে। কিন্তু এখন তাদের আরও নমনীয় হওয়া ছাড়া উপায় নেই।