সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

সোনিয়ার পর রায়বেরিলিতে গান্ধী পরিবারের কে আসছেন

ভারতের উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলি আসন থেকে তাহলে কি প্রিয়াঙ্কা গান্ধীই কংগ্রেসের প্রার্থী হচ্ছেন? সোনিয়া গান্ধীর চিঠি তেমনই জল্পনার জন্ম দিয়েছে।

বয়স ও অসুস্থতার দরুন এবার লোকসভা ভোটে দাঁড়ানোর ঝুঁকি ও ঝক্কি নিচ্ছেন না কংগ্রেসনেত্রী সোনিয়া গান্ধী। রায়বেরিলি থেকে লোকসভায় না দাঁড়িয়ে তিনি রাজস্থান থেকে রাজ্যসভায় আসতে চলেছেন। মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছেন। তারপরই তিনি রায়বেরিলির জনগণের উদ্দেশে লিখেছেন এক খোলাচিঠি। প্রিয়াঙ্কাকে ঘিরে জল্পনার জন্ম সেখান থেকেই।

হিন্দিতে লেখা সেই চিঠিতে সোনিয়া বলেছেন, ‘আমাদের পরিবার দিল্লিতে অসম্পূর্ণ। তা সম্পূর্ণ হয় রায়বেরিলি এসে। আপনাদের সঙ্গ পাওয়ার পর।’

এরপর নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে সোনিয়া লিখেছেন, ‘আমার হৃদয় ও আত্মা সর্বদা আপনাদের সঙ্গে থেকেছে। সেভাবেই থাকবে। আমি জানি, আপনারাও সব সময় আমার ও আমার পরিবারকে সেভাবে আগলে রাখবেন, এত দিন যেভাবে রেখেছেন।’

জল্পনার জন্ম এই চিঠি থেকেই। ভবিষ্যতের সাহচর্য পাওয়ার কথা জানানোর মধ্য দিয়ে সোনিয়া কি এটাই বোঝাতে চেয়েছেন, লোকসভায় প্রার্থী না হলেও রায়বেরিলির সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘকালের পারিবারিক বন্ধন অটুট থাকবে। তাঁর কন্যা প্রিয়াঙ্কা বইবেন উত্তরাধিকারের সেই পতাকা।

জল্পনার জন্ম এই চিঠি থেকেই। ভবিষ্যতের সাহচর্য পাওয়ার কথা জানানোর মধ্য দিয়ে সোনিয়া কি এটাই বোঝাতে চাইলেন, লোকসভায় প্রার্থী না হলেও রায়বেরিলির সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘকালের পারিবারিক বন্ধন অটুট থাকবে।

রায়বেরিলির জনগণকে ‘স্নেহের পরিবারজন’ বলে সম্বোধন করে সোনিয়া চিঠিতে লিখেছেন, ‘এই সম্পর্ক বহু প্রাচীন। শ্বশুরবাড়ির দৌলতে সেই স্নেহ-ভালোবাসা পাওয়ার সৌভাগ্য তাঁর হয়েছে। সম্পর্কের সেই শিকড় গভীরে প্রোথিত।’

সেই ইতিহাস বর্ণনা করে সোনিয়া লিখেছেন, ‘স্বাধীনতার পর প্রথম নির্বাচনে আপনারা আমার শ্বশুর ফিরোজ গান্ধীকে প্রথমবার জিতিয়ে দিল্লি পাঠিয়েছিলেন। এরপর আমার শাশুড়ি ইন্দিরা গান্ধীকেও আপনারা নিজের করে নিয়েছিলেন। জীবনের নানা ওঠানামা সত্ত্বেও সম্পর্কের এই ধারাবাহিকতা দিন দিন মজবুত হয়েছে। পরস্পরের প্রতি আস্থাও বৃদ্ধি পেয়েছে।’

সোনিয়া লিখেছেন, ‘শাশুড়ি ও জীবনসাথিকে (রাজীব গান্ধী) চিরকালের মতো হারানোর পর আমিও আপনাদের কাছে এসেছিলাম। আপনারাও নিজেদের আঁচল বিছিয়ে আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। পরপর দুটি নির্বাচনে প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও আপনারা আমার পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছেন। এই সাহচর্য ও সমর্থন আমি কখনো ভুলতে পারব না। এ কথা বলতে আমার গর্ব হয়, আজ আমি যা কিছু হতে পেরেছি, তা আপনাদের জন্যই। এই আস্থা ও ভরসার মর্যাদা সব সময় দেওয়ার চেষ্টা করে যাব।’

চিঠির শেষাংশে সোনিয়া তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কথা লিখে বলেছেন, ‘বয়স হয়েছে। অসুস্থতাও গেড়ে বসেছে। লোকসভার আগামী ভোটে তাই দাঁড়াচ্ছি না। এই কারণে আপনাদের সরাসরি সেবা করতে আমি পারব না; কিন্তু এটা সত্যি, আমার মন-প্রাণ সর্বদা আপনাদের সঙ্গেই থাকবে। আমি জানি, আপনারাও আমাকে ও আমার পরিবারকে কঠিন সময়েও এভাবেই আগলে রাখবেন, যেমন এতকাল করে এসেছেন।’

উত্তর প্রদেশে লোকসভার তিনটি আসন রায়বেরিলি, আমেঠি ও সুলতানপুর ছিল কংগ্রেসের গড়। ক্রমে ক্রমে দল যত ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে, এই তিন কেন্দ্রে কংগ্রেসের মুঠিও তত আলগা হয়েছে। গত নির্বাচনে আমেঠি থেকে রাহুল পরাস্ত হন। কিন্তু রায়বেরিলিতে সোনিয়া জিতেছিলেন সোয়া লাখেরও বেশি ভোটে।

কংগ্রেসের জন্য সমাজবাদী পার্টিও বহু বছর এই দুই আসনে প্রার্থী দিত না। এবার কী হবে, সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হবে কি না, এখনো অনিশ্চিত। যেমন অনিশ্চিত সোনিয়া সরে দাঁড়ানোয় রায়বেরিলির কী হবে।

কংগ্রেসের একাংশ এখনো মনে করছে, ওই আসনে প্রিয়াঙ্কাই সম্ভবত হবেন গান্ধী পরিবারের উত্তরাধিকারী। প্রিয়াঙ্কা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। গত নির্বাচনেও তিনি ছিলেন উত্তর প্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত। রায়বেরিলিতে মায়ের হয়ে প্রচারেও তিনি সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম পছন্দের।

পাশাপাশি কংগ্রেসে এই ভাবনাও রয়েছে, আমেঠিতে স্মৃতি ইরানির কাছে রাহুলের হেরে যাওয়ার মতো ‘অঘটন’ রায়বেরিলিতে ঘটলে প্রিয়াঙ্কার রাজনৈতিক জীবনে সেটা হবে বিরাট ধাক্কা।

কংগ্রেসে এই ভাবনাও রয়েছে, আমেঠিতে স্মৃতি ইরানির কাছে রাহুলের হেরে যাওয়ার মতো ‘অঘটন’ রায়বেরিলিতে ঘটলে প্রিয়াঙ্কার রাজনৈতিক জীবনে সেটা হবে বিরাট ধাক্কা।

প্রিয়াঙ্কা নিজে এ নিয়ে মুখ খোলেননি। কিছুদিন আগে একটা প্রস্তাব এসেছিল, প্রিয়াঙ্কাকে নরেন্দ্র মোদির বিপরীতে বারানসি থেকে দাঁড় করানোর। সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রিয়াঙ্কার জবাব ছিল, দল যা নির্দেশ দেবে, তিনি তা-ই মেনে নেবেন।

রায়বেরিলি নিয়ে প্রিয়াঙ্কার মতামত অবশ্য এখনো জানা যায়নি। কংগ্রেস সূত্রের খবর, সবকিছু নির্ভর করছে জোটের সিদ্ধান্তের ওপর। উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি কংগ্রেসকে ১১টির বেশি আসন ছাড়তে রাজি নয়। কংগ্রেস চাইছে ২২টি। টানাপোড়েন অব্যাহত।

প্রিয়াঙ্কা প্রার্থী না হলে রায়বেরিলি থেকে রাহুল কি দাঁড়াতে পারেন? এই প্রশ্নও ঘোরাফেরা করছে। কেউ কেউ মনে করেন, উত্তর প্রদেশ থেকে একেবারে সরে যাওয়া রাহুলের পক্ষে ভালো নয়। হয় আমেঠি নতুবা রায়বেরিলিতে তাঁর ফেরা উচিত। কিন্তু কেরালার ওয়েনাডের বদলে রাহুল উত্তর প্রদেশকে বেছে নেবেন, তেমন কোনো ইঙ্গিত এখনো নেই।

আমেঠি ও রায়বেরিলির ধোঁয়াশা এখনো কাটছে না। যদিও সোনিয়ার চিঠি ধারাবাহিকতা রক্ষার স্পষ্ট ইঙ্গিতবাহী। সে ক্ষেত্রে প্রিয়াঙ্কার নামই বড় হয়ে উঠছে।