ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে যাঁরা ভারত সরকার ও বিজেপির সমালোচক, তাঁদের ভিসা ভারত প্রত্যাহার করছে বলে এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। আজ সোমবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রবাসীদের বা ভারতীয়দের বিয়ে করেছেন, এমন বিদেশিদের বিশেষ কার্ড ওভারসিজ সিটিজেনস অব ইন্ডিয়া (ওসিআই) দেওয়া হয়, অর্থাৎ তারা বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়। তবে এটি পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্ব নয়। এই ওসিআই কার্ড এখন বিজেপির সমালোচকদের থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এশিয়ায় এইচআরডব্লিউর ডিরেক্টর এলেইন পিয়ারসন।
সম্প্রতি ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুইডেনের শিক্ষাবিদ অশোক সোয়াইনের ওসিআই মর্যাদা প্রত্যাহার করেছে ভারত সরকার। তিনি বিজেপির একজন কট্টর সমালোচক। ২০২২ সালে তাঁর বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর অধ্যাপক সোয়াইন আদেশটিকে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। আদেশটি বাতিল হয়ে গিয়েছিল। এরপর ২০২৩ সালের মাঝামাঝি তাঁর ওসিআই মর্যাদা আবার প্রত্যাহার করা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ এবং ‘ভারতের সামাজিক কাঠামোকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার’ অভিযোগে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে এক সাক্ষাৎকারে সোয়াইন বলেছেন, তাঁর মামলাটি ভারতের বাইরের অন্য শিক্ষাবিদদের ভয় দেখানোর জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সোয়াইন বলেছেন, ‘সরকার একটা ভয় তৈরি করতে চায়। কারণ, মানুষ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে চায় না।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, এই একইভাবে ভারতের কর্তৃপক্ষ নিতাশা কল নামের এক ব্রিটিশ অধ্যাপককে দেশে ফিরতে দেয়নি তাঁর বৈধ ওসিআই কার্ড থাকা সত্ত্বেও। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরে জানায়, কোনো বিদেশি নাগরিকের ভারতে প্রবেশের বিষয়টি একটি সার্বভৌম সিদ্ধান্ত। অধ্যাপক কল দীর্ঘ সময় বিজেপির একজন কট্টর সমালোচক।
একটি দীর্ঘ তালিকা দিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, কখনো মর্যাদা প্রত্যাহার করা হচ্ছে বা কখনো দীর্ঘদিন বসবাসকারী সাংবাদিকদের ভারত থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। যেমন সম্প্রীতি দেওয়া হয়েছে ভ্যানেসা ডনিয়াক নামের এক ফরাসি সাংবাদিককে। প্রথম আলোর তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলে ডনিয়াক বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাননি।
এ ছাড়া ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিখ সাংবাদিক অঙ্গদ সিংকে বহিষ্কার করা হয়। ব্রিটিশ সমাজকর্মী অমৃত উইলসনকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি ২০২০-২১ সালে কৃষক আন্দোলনে পুলিশের দমন বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করার কারণে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে ভারতে গবেষণা করছেন ব্রিটিশ নৃতাত্ত্বিক ফিলিপো ওসেলা। গবেষণা করার জন্য বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে ভারতের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। একইভাবে যাঁদের ভারতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান লেখিকা ক্যাথরিন হিউমেল, পাকিস্তানি শিক্ষাবিদ অ্যানি জামান, সাবেক কূটনীতিবিদ ও সমাজকর্মী কুর্ট ভোগেল, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটসের পরিচালক মুকুন্দরাজ কেটল এবং গ্রিনপিসের দুই অ্যাক্টিভিস্ট বেন হেরগ্রভেস ও অ্যারন গ্রে-ব্লক-কে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মন্তব্য করেছে, ‘বিদেশি লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মীদের উত্তরোত্তর আরও বেশি করে ভারতে প্রবেশের পথ বন্ধ করা হচ্ছে সম্ভবত রাজনৈতিক কারণে।’
এ প্রসঙ্গে এলেইন পিয়ারসন বলেছেন, ‘বিজেপির অপমানজনক ও বৈষম্যমূলক নীতির সমালোচনাকারী প্রবাসী সদস্যদের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের প্রতিশোধমূলক আচরণ যে বিষয়টিকে প্রকাশ্যে আনে তা হলো, কর্তৃপক্ষ ক্রমাগতভাবে সংলাপ ও সমালোচনার বিরুদ্ধে বৈরী হয়ে উঠছে।’