ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও পরিচালন কমিটির নিষেধের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার নগাও জেলার বটদ্রবায় পঞ্চদশ শতকের অসমীয়া সাধক ও সমাজ সংস্কারক শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের জন্মস্থান ও মঠে রাহুল গান্ধীকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে এলাকায় প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে গতকাল রোববার আসামে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের ‘ভারত জোড়ো ন্যায়যাত্রা’য় হামলার অভিযোগ ওঠে। আসাম পুলিশের মহানির্দেশক জি পি সিংকে অভিযোগ নথিবদ্ধ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মধ্য আসামের বটদ্রবায় শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের সত্র (জন্মস্থান ও মঠ) পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা ও পরিচালন কমিটির নিষেধের পর বিষয়টি নিয়ে এলাকায় প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
আজ সকালে রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস নেতৃত্ব নিষেধ অমান্য করে বটদ্রবার উদ্দেশে রওনা দিলে হাইবরাগাঁও নামের এক জায়গায় তাদের থামানো হয়। মঠ, মন্দিরসংলগ্ন এলাকাসহ গোটা অঞ্চল ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
এ ঘটনার জেরে কংগ্রেস সরাসরি সমালোচনা করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাহুল কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি কি এখন সিদ্ধান্ত নেবেন, কে মন্দিরে যাবে আর কখন? আমরা কোনো ঝামেলা না করেই মন্দিরে প্রার্থনা করতে চাই।’
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ আজ সকালে বলেন, রাহুল গান্ধীকে শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের জন্মস্থানে যেতে বাধা দিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরাসরি আসাম সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন। ঘটনার জেরে রাহুল গান্ধী হাইবরাগাঁওয়ে ধরনায় বসে পড়েন। তিনি জানান, মঠ পরিদর্শনের অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানে বসে থাকবেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাহুল ও অল্পসংখ্যক নেতাকে ভারতীয় সময় বেলা তিনটে নাগাদ মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জয়রাম রমেশ বলেন, ‘হিমন্ত বিশ্বশর্মা যে বেলা আড়াইটায় বলবেন না, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে রাহুলকে কিছুতেই মন্দিরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে না, তার কী নিশ্চয়তা? আমাদের ১১ জানুয়ারি সত্রে (মঠ) প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। হঠাৎ ২০ জানুয়ারি বলা হলো, রাহুল রামমন্দির উদ্বোধনের পরই সেখানে যেতে পারবেন।’
রমেশ বলেন, বটদ্রবা অঞ্চলে বড়সংখ্যক হিন্দুত্ববাদী সমর্থক জড়ো হয়েছেন। রাহুল গান্ধী সেখানে গেলে উত্তেজনা বাড়তে পারে, এই অজুহাতে তাঁকে সেখানে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এরপর তিনি একা পবিত্র স্থানে যেতে চেয়েছিলেন। তবু তাঁকে বলা হয়, আজ সকালে তিনি সেখানে যেতে পারবেন না। প্রচারের আলো যাতে অযোধ্যা থেকে অন্যত্র চলে না যায়, তা মাথায় রেখেই রাহুল গান্ধীকে আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাহুল গান্ধী ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আসামের মোট ১৭ জেলায় তাঁর গণসংযোগ কর্মসূচি চালাবেন। বটদ্রবায় মন্দির পরিদর্শনবিষয়ক সমস্যা মেটার পর নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী পদযাত্রা চলবে।
এর আগে গতকাল উত্তর আসামের শনিতপুর জেলার জামুগুড়িহাটে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো পদযাত্রায় হামলা হয় বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। কংগ্রেসের দুই শীর্ষ নেতা জাতীয় স্তরে অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জয় রাম রমেশ ও দলের রাজ্য শাখার সভাপতি ভূপেন বরার ওপর হামলা হয়।
রমেশ অভিযোগ করেন, লাগাতার জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে, গাড়ির কাঁচ ভেঙে এবং ঠান্ডা জল ছিটিয়ে নেতা–কর্মীদের বিব্রত করা হয়।। ভূপেন বরা বড় ধরনের হামলা থেকে কোনোরকমে রক্ষা পান। একটা পর্যায়ে রাহুল গান্ধী গাড়ি থেকে নেমে বিজেপির সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলারও চেষ্টা করেন।